বুয়েটের রিপোর্ট অনুসরণ না করায় ওয়াহেদ ম্যানশনের সংস্কার বন্ধ

02বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সুপারিশ অনুসরণ না করায় ওয়াহেদ ম্যানশন সংস্কারের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে রাজউক। ভবনটি ব্যবহারে সিটি করপোরেশন ও বুয়েটের পক্ষ থেকে ভবনের কলাম ও বিমে পর্যাপ্ত রড ব্যবহার করে মজবুত করার পাশাপাশি বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। মেরামতে সেসব শর্ত অনুসরণ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) এ ভবনটির মেরামত কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজউকের অঞ্চল-৫ এর অথরাইজড অফিসার মোহাম্মদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, মালিক এরই মধ্যে ভবনের নিচতলার দেয়ালগুলো প্রলেপ দিয়ে মেরামত করেছেন। ভবনটির দ্বিতীয় তলার উত্তর পাশের দেয়ালে কিছু ইটের গাঁথুনি দেওয়া হয়েছে। নিচ তলার রুমগুলোকে দোকান ঘর হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি পিলারগুলোর বিভিন্ন অংশ ভেঙে নতুন করে প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কোনও রড ব্যবহার করা হয়নি। তাছাড়া আগের চেয়েও মোটা করা হয়নি বরং পোড়া প্রলেপ তুলে ফেলায় কলাম ও বিমগুলো আগের চেয়ে চিকন হয়ে পড়েছে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে এ ভবন থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুনে ৭১ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের তিন মাস পর গত মে’র মাঝামাঝি সময় থেকে ভবনটির মেরামত কাজ শুরু করে ভবন মালিক। তবে এতে বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শ মানা হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভবনটির নিচতলায় দোকান ভাড়া নেওয়া ব্যবসায়ী ও স্থানীয় দোকানিরা।
ভবনটির বিষয়ে বুয়েট ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণ ও আগুনে ওয়াহেদ ম্যানশনের কলাম ও বিমের যেসব অংশে ক্ষতি হয়েছে বা পুড়ে গেছে, সেসব অংশ পুরোপুরি ফেলে দিতে হবে। এরপর নতুন করে রড ও কংক্রিটের ঢালাই করে মজবুত করতে হবে।
কিন্তু ভবনের মেরামত কাজে বিম ও কলামে কোনও ধরনের রড ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। কর্মরত নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, তারা ভবনে নতুন করে কোনও রডের ব্যবহার করছেন না। মালিক পক্ষ থেকে যেভাবেই নির্দেশনা রয়েছে ঠিক সেভাবেই কাজ করছেন।

ভবনটির নিচতলায় দোকান করতেন পটুয়াখালীর বাসিন্দা মোহাম্মদ হানিফ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অনেক বছর ধরেই এখানে ব্যবসা করছি। এখন দোকান নেই। ভ্যানে করে ডাব বিক্রি করছি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে থাকি। রাজমিস্ত্রিরা কাজ করে। কোনও রড ব্যবহার করতে দেখিনি।01
অগ্নিকাণ্ডের পর বুয়েট ও সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি ওয়াহেদ ম্যানশনের স্ট্রাকচারাল প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আগামী (প্রতিবেদন প্রকাশের দিন থেকে) ৪৫ দিনের মধ্যে ভবনটির ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট (ডিইএ) করতে হবে। ডিইএ’র রিপোর্ট অনুযায়ী পরের ১৫০ দিন বা পাঁচ মাসের মধ্যে নতুন করে ভবনটির প্রয়োজনীয় মজবুত (রেট্রোফিটিং) করার কাজ করতে হবে। এ দুই সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ভবনটি ব্যবহার করা যাবে না।
এছাড়া, প্রতিবেদনে ওই ভবনের পাশের বাকি চারটি ভবনের সামনের দিকের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ভেঙে মেরামতের পর ডিএসসিসি ও রাজউকের যথাযথ অনুমোদনের পর ব্যবহারের কথাও বলা হয়েছে। যদিও ওই ভবনগুলোর মেরামত কাজ এখনও শুরু হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বলেছি ভবনটি ব্যবহার করতে হলে ৪৫ দিনের মধ্যে ডিইএ রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। এটা অব্যশই লাগবে। এই রিপোর্ট ১৫০ থেকে ২০০ পাতার হয়ে থাকে। সেখানেই বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে, ভবনের কোথায় কী করতে হবে। এখন এই রিপোর্ট তৈরি করছে কিনা সেটা দেখতে হবে। না হয় ভবনটি মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকবে।’
রাজউকের অঞ্চল-৫ এর অথরাইজড অফিসার মোহাম্মদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার সরেজমিন অভিযান পরিচালনা করি। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই শ্রমিকরা নির্মাণ কাজ করছে। ভনটিতে আগুন লাগার পর যে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে তারা বলেছে, বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করে সেই সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এই অ্যাসেসমেন্ট করার পর বিষয়টি রাজউক ও সিটি করপোরেশনকে জানাতে হবে। কিন্তু ভবন মালিক তা করেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরেজমিন পরিদর্শনকালে আমরা দেখেছি, ভবনের কলাম ও বিমগুলোকে মোটা করা হয়নি। বরং কলাম ও বিমগুলোর ভেতরের রড দেখা যাচ্ছে। শুধু প্রলেপ দিয়েই কাজ শেষ করছে তারা। বুয়েটের সুপারিশ কোনোভাবেই মানছে না। পরে আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়ে এসেছি। নতুনভাবে লাগানো ইটগুলো ভেঙে দিয়েছি।’