নিচে নামছে ভূগর্ভস্থ পানি, গাছের জন্য দুঃসংবাদ





গাছপালার ওপরে ঘন মেঘরাজধানী ঢাকা ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। চাহিদার জোগান দিতে অতিমাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করায় এর স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। এ কারণে এখন ওয়াসার বসানো বেশিরভাগ পাম্পে ঠিকমতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পাম্পের পাইপ আরও গভীরে নিতে হচ্ছে। পানি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এর পরিণাম ভোগ করতে হবে। আর উদ্ভিদবিদরা বলছেন, এটি নগরীর গাছপালার জন্যও সুখবর নয়।

পানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশ্রাফ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে নতুন কোনও অগ্রগতি নেই, বরং দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। তবে আশার দিক হচ্ছে, ঢাকা ওয়াসা ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এটি যদি বাস্তবায়ন না করা হয় তাহলে পানির স্তর আরও নিচে নেমে যাবে। এজন্য নগরবাসীকে বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে।
তিনি আরও বলেন, গবেষণা অনুযায়ী প্রতিবছর কমপক্ষে এক মিটার করে ভূগর্ভস্থ নিরাপদ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। তাছাড়া ঢাকার আশপাশের নদীগুলো অতিমাত্রায় দূষিত হয়ে পড়ায় নদীর পানি নগরীর বাসাবাড়িতে পরিবেশনের জন্য পুরোপুরি নিরাপদ করা যাচ্ছে না। সরকার বিভিন্নভাবে চেষ্টা করলেও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দিয়ে পানি সঠিক মাত্রায় নিরাপদ করা যাচ্ছে না। এছাড়া এই দূষিত পানির প্রভাব পড়ছে ভূগর্ভস্থ পানিতেও।
তিনি জানান, ভূগর্ভস্থ পানি নিচে নেমে যাওয়ায় পরিবেশ বা গাছপালার কোনও ক্ষতি হয় কিনা, সে বিষয়ে এখনও কোনও গবেষণা হয়নি। তবে মাটি যখন পানিশূন্য হয়ে পড়বে তখন পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কা তো থাকবেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, বিষয়টি নিয়ে আরও ভালোভাবে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবছর যে পরিমাণ পানি উত্তোলন করা হয় সেই শূন্যস্থান স্বাভাবিক নিয়মেই পূরণ হওয়ার কথা। কিন্তু নগরীতে কংক্রিটের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় খোলা স্থান ঢেকে যাচ্ছে। যে কারণে বৃষ্টির পানি মাটি শোষণ করে নিতে পারছে না। ফলে ভূগর্ভস্থ শূন্যস্থানও পূরণ হচ্ছে না। ফলে ভূগর্ভের পানি কমছে। আগে থেকেই অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে অতিমাত্রায় নলকূপ বসিয়ে পানি উত্তোলনের ফলে এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে।
ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, ভূগর্ভের পানি নিচে নেমে যাওয়ায় তারা এখন নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল হচ্ছেন। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানির ৭০ ভাগ ভূগর্ভস্থ আর ৩০ ভাগ ভূ-উপরিস্থ। ২০২১ সালের মধ্যে এই চিত্র উল্টে যাবে। এ জন্য এখন পদ্মা ও মেঘনা থেকে পানি এনে তা শোধন করে সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) একেএম সহিদ উদ্দিন প্রথম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমানে রাজধানীতে দৈনিক ২৪৫-২৫২ কোটি লিটার পানির চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে উত্তোলন হচ্ছে প্রায় ২৫৫ কোটি লিটার। আমরা চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন করছি। তবে এর বেশিরভাগ পানি আসে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে।’
তিনি বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে আমাদের ৩টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। আমরা আশা করছি ২০২১ সালের মধ্যে ভূগর্ভের পানি উত্তোলন অনেক কমে আসবে।’
ঢাকার পানি স্তর নিচে নেমে যাওয়া গাছপালার জন্য খুব একটা বিপদ না হলেও সুখবর নয় বলে মনে করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ বোটানি বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।
বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, পানির বেশ কয়েকটি স্তর আছে। কোনও কোনও এলাকায় ৪-৫ ফুট নিচে গেলেও স্তর পাওয়া যায়। কোথাও কোথাও ৮-১০ ফুট। আবার কোথাও ২০-৪০ ফুট গেলেও পানি পাওয়া যায়। এখন আমাদের ঢাকার ভূগর্ভস্থ যে পানির স্তর রয়েছে, সেটি ১০০ থেকে ৩০০ ফুট নিচে চলে গেছে। আগে ১০০ ফুট নিচে গেলেও পানি পাওয়া যেতো। আর ভালো পানি পেতে হলে ৭০০-৮০০ ফুট পর্যন্ত নিচে যেতে হয়।
তিনি বলেন, গাছের শেকড় এত গভীরে সাধারণত যায় না। এই পানির সঙ্গে গাছের বাড়া-কমারও খুব একটা সম্পর্ক নেই। তবে বিষয় হচ্ছে গাছকে কিন্তু পানি পেতে হবে এবং এটি মাটির গুণাগুণের ওপর নির্ভর করবে।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মাত্র ১০ মিটার নিচে গেলেই পানি পাওয়া যায়। সেখানে গাছের অবস্থা অনেক ভালো। ঢাকায়ও যদি এমন হতো তাহলে গাছের জন্য আরও ভালো হতো বলে মন্তব্য করেন এই উদ্ভিদবিদ।