যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রতিবেদন

ঈদযাত্রায় সড়কে ঝরেছে ২৫৩ প্রাণ

যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সংবাদ সম্মেলন

এবারের ঈদুল আজহায় দেশের সড়ক-মহাসড়কে ১৯৯টি দুর্ঘটনায় ২৫৩ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত ‘ঈদুল আজহার ঈদ আনন্দ যাত্রায় দুর্ঘটনা প্রতিবেদন ২০১৯’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান সংগঠনটির সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জি এম কামরুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৬ আগস্ট থেকে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরা ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ১৩ দিনে সড়ক,রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ২৫০টি দুর্ঘটনায় ২৯৯ জন নিহত ও ৭৮৮ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫৩ জন নিহত ও ৭৬৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও নৌপথে ২১ দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত, ৫১ জন নিখোঁজ ও ২৩ জন আহত; রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে পূর্বাঞ্চলে ২১ জন ও পশ্চিমাঞ্চলে ৯ জনসহ মোট ৩০ জন নিহত হয়েছেন।’

যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের দুর্ঘটনা গবেষণা ও মনিটরিং সেলের সদস্যরা দেশের বহুল প্রচারিত বিশ্বাসযোগ্য ১৮টি জাতীয় দৈনিক, ৬টি আঞ্চলিক দৈনিক ও ১০টি অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত তথ্য মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জি এম কামরুল ইসলাম বলেন, ‘যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দুর্ঘটনাগুলোর জন্য যানবাহনের অতিরিক্ত গতি, ওভারটেকিংয়ের মানসিকতা, নগর পরিবহনের অনেক ফিটনেসবিহীন বাস দূরবর্তী রুটে চলাচল, বৈধ চালক সংকট, নির্ঘুম অবস্থায় বিরামহীন গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত ট্রিপ দিতে মালিকদের চাপ, অতিরিক্ত যাত্রী চাপ ও যাত্রীদের তাড়াহুড়ার মানসিকতা, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, মহাসড়কে ছোট যানবাহন অবাধে চলাচল, আইনের কার্যকর প্রয়োগ না করা, ঈদ ফেরত যাতায়াতে মনিটরিং ব্যবস্থার শিতিলতা এবং নৌযানের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সামগ্রী না থাকাই এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।

নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য তিনি ১৫ সুপারিশমালা তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

এগুলো হলো- যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ, চালকদের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান, চালকদের বিশ্রাম ও কর্মঘণ্টা মানার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার শতভাগ বাস্তবায়ন করা, বৈধ চালক তৈরি করা, হালকা গাড়ি চালানো লাইসেন্স নিয়ে ভারী গাড়ি চালাচ্ছেন এমন চালকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া, মহাসড়কে নছিমন-করিমন,ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা বন্ধে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত শতভাগ বাস্তবায়ন করা, মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া, রেশনিং পদ্ধতিতে ছুটির ব্যবস্থা করা, যাত্রী ও পথচারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা, ঈদযাত্রায় সরকারি-বেসরকারি সংস্থার স্টাফবাস যাত্রী বহনে ব্যবহার করা এবং প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে যানবাহন ভাড়া করা, ঈদ ফেরত যাতায়াতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, রেলের ছাদে রেলিং এর ব্যবস্থা করা, মোটর সাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপদ করা, স্কাউট সদস্যদের সাথে বিএনসিসি-সহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়োগ প্রদান এবং যাত্রী বীমা চালু করা।

সংবাদ সম্মেলনে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ, পুলিশ কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডিএ তায়েফ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মোখলেছুর রহমান, সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের যুগ্ম-সম্পাদক হানিফ খোকন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।