শহীদ পরিবারের জমি দখল ঠেকাতে ব্যবস্থা না নেওয়ায় পুলিশের ডিসি বরখাস্ত

ইব্রাহীম খান

শহীদ এ কে এম শামসুল হক খানের পরিবারের জমি দখল ঠেকাতে কোনও কার্যকর ভূমিকা নেননি ডিএমপির ওয়ারী জোনের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান। এ অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার (২৬ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ইব্রাহীম খানকে বরখাস্ত করা হয়। পরে তাকে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে ইব্রাহীম খানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে শহীদ শামসুল হক খানের মা মাসুদা খানম ঢাকার নবাবপুর রোডের ২২১ নম্বর হোল্ডিংয়ের জমিটি বরাদ্দ পান। তিনি (মাসুদা খানম) মারা যাওয়ার পর শামসুল হক খানের দুই ভাই ফজলুল হক খান ও মো. আজহারুল হক খানের নামে জমিটির লিজ গ্রহণ করা হয়। ২০১৭ সাল পর্যন্ত লিজমানি পরিশোধ করেন তারা। ২০১৮ সালে লিজ নবায়নের জন্য ঢাকার জেলা প্রশাসকের বরাবর আবেদন করা হয়। ওই আবেদনটি জেলা প্রশাসকের কাছে বিবেচনাধীন থাকা অবস্থাতেই ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জমিটি দখল করে নেন জাবেদ উদ্দিন শেখ নামে এক ব্যক্তি।

এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, জাবেদ উদ্দিন শেখ নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাতটার দিকে ৩০-৩৫ জন সন্ত্রাসী অবৈধ অস্ত্রসহ নবাবপুর রোডের ২২১ নম্বর হোল্ডিংয়ের জমিতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে। ভবনটিতে ‘মাসুদা করপোরেশন’ নামে একটি পাওয়ার টুলস অ্যান্ড হ্যান্ডি টুলসের প্রতিষ্ঠান ছিল। সন্ত্রাসীরা ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা কে এম শহীদুল্লাহ এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখায় এবং তাদের হাত-পা বেঁধে ফেলে। তাদের এ অবস্থায় রেখে পরদিন (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল চারটা পর্যন্ত আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকার মালামাল ডাকাতির মাধ্যমে লুটপাট করে নিয়ে যায় তারা।

অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ ও ডাকাতির মাধ্যমে পাঁচ কোটি টাকার মালামাল লুটের অভিযোগে ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে মামলা দায়ের করেন লিজ গ্রহীতা মো. আজহারুল হক খানের ছেলে শামছুল হাসান খান।

কেবল অনুপ্রবেশ ও লুটপাটই নয়, ২৯ সেপ্টেম্বর ২২১ নম্বর হোল্ডিংয়ে থাকা তিনতলা ভবন ভেঙে সেখানে নতুন স্থাপনার বেজমেন্টের কাজ শুরু করে জাবেদ শেখের লোকেরা। পুলিশ বেদখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় লালবাগের তৎকালীন ডিসি (বর্তমানে ওয়ারীর ডিসি) মোহাম্মদ ইব্রাহিম খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মো. আজহারুল হক খান।

তার অভিযোগটি তদন্ত শেষে এ বছরের ২৩ মে ব্যাখ্যা চেয়ে ডিসি ইব্রাহিম খানকে চিঠি পাঠান পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট-১) মো. আমিনুল ইসলাম। ওই চিঠিতে তিনি বলেন, ‘ঢাকার ২২১ নবাবপুর রোডের উল্লিখিত সম্পত্তির বৈধ দখলকারীকে বেআইনিভাবে উচ্ছেদ করে সেখানে থাকা তিনতলা একটি বিল্ডিং সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়। জমিটি অবৈধভাবে দখলের পর ওই জায়গায় নতুন করে নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখা হয়। এ ব্যাপারে আপনি জ্ঞাত হওয়া সত্ত্বেও যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি, বা যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেননি। আপনি সরকারি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন, যা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮-এর বিধি নম্বর ২(খ)-এর সংজ্ঞা অনুসারে অসদাচরণ হিসেবে পরিগণিত।’

পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট-১) মো. আমিনুল ইসলামের কাছে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় ইব্রাহিম খানকে।

এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়ারী জোনের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহীম খানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একইসঙ্গে তাকে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, শহীদ এ কে এম শামসুল হক খান ১৯৭১ সালে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ছিলেন। ২৬ মার্চ ভোরে পাকিস্তানি বাহিনী তাকে কুমিল্লা সার্কিট হাউজ থেকে গ্রেফতার করে সামরিক প্রহরায় ময়নামতি সেনানিবাসে নিয়ে যায়। ৩০ মার্চ বন্দি অবস্থায় তাকে হত্যা করা হয়।