মাদক মামলায় হয়রানি: বিভাগীয় শাস্তির মুখে দুই এএসআই

মোটরসাইকেল মেকানিক মো. কামাল হোসেনঢাকার মোহাম্মদপুরে এক মোটরসাইকেল মেকানিককে মাদক মামলায় হয়রানির অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। অভিযোগ পেয়ে মোহাম্মদপুর থানার দুই এএসআইকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে তেজগাঁও ডিসি অফিসে সংযুক্ত করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ মেলে। তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এএসআই জাকারিয়া ও আলমগীরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) থানা থেকে তাদের প্রত্যাহার করে ডিসি অফিসে সংযুক্ত করা হয়।
ডিএমপি তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আনিসুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে তিনি এ তথ্য জানান।

এর আগে সন্ধ্যায় দুই এএসআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ওহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ও তার বাবার নামের সঙ্গে শ্যামলীর মো. কামাল হোসেনের নামের মিল থাকায় একজন এএসআই তাকে মোহাম্মদপুর থানায় নিয়ে আসেন। পরে যাচাই করে দেখা যায়, থানায় নিয়ে আসা ব্যক্তি ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি এক নয়। তখন কামালকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে একই থানার একজন এসআই আবারও কামালের গ্যারেজে তাকে খুঁজতে যান। হয়রানির অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্তের স্বার্থে দু’জন পুলিশকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে ডিসি অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগটির তদন্ত চলছে।

ভুক্তভোগী কামাল ও থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩০ আগস্ট বিকালে মোহাম্মদপুর থানার শ্যামলী রিং রোডের বাদশাহ ফয়সাল ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গলিতে চেকিংয়ের সময় মোহাম্মদপুর থানার এএসআই জাকারিয়া কামালকে আটক করেন। চেকিংয়ের সময় ভোটার আইডি দেখালে ওই কর্মকর্তা মোটরসাইকেল মেকানিক কামালকে জানান, তার নামে থানায় ২০০৯ সালের একটি মাদক মামলা রয়েছে। এএসআই জাকারিয়ার মোবাইলে থাকা গ্রেফতারি পরোয়ানার ছবি দেখিয়ে কামালকে থানায় নিয়ে আসা হয়। থানায় আনার পর যাচাই করে দেখা যায়, কামাল ও গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি এক নয়। বাবার নাম মিল থাকলেও ওয়ারেন্ট ইস্যুকৃত ব্যক্তির মায়ের নাম, জন্ম তারিখ, এলাকার ঠিকানা ও পেশার কোনও মিল নেই। প্রকৃত আসামির নাম মো. কামাল। আর মোটরসাইকেল মেকানিকের নাম মো. কামাল হোসেন।

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, মোটরসাইকেল মেকানিক কামালকে থানায় নিয়ে আসার পর যাচাই করে মিল না পাওয়ায় তাকে ওই দিনই ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এর একদিন পর গত ১ সেপ্টেম্বর ওই মোটরসাইকেল মেকানিক কামালকে খুঁজতে তার গ্যারেজে যান মোহাম্মদপুর থানার আরেকজন এএসআই আলমগীর। তিনি মামলার ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে কিছু খরচ দাবি করেন।

হয়রানির অভিযোগ পেয়ে ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার (অপরাধ) শেখ নাজমুল আলম ২ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারকে অবহিত করেন। শেখ নাজমুল আলম বলেন, তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারকে জানানোর পর তিনি ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা চাই, কোনও নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হোক।

তেজগাঁও বিভাগের ডিসি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিকালেই মোটরসাইকেল মেকানিক কামালকে ডিসির অফিসে ডেকে পাঠানো হয়। একইসঙ্গে ডাকা হয় দুই এএসআইকে। মোহাম্মদপুর জোনের এডিসি ওহিদুল ইসলাম অভিযুক্ত দুই পুলিশ অফিসার ও ভুক্তভোগী কামালের জবানবন্দি নেন।

এডিসি ওহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রাথমিকভাবে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় এএসআই জাকারিয়া এবং এএসআই আলমগীরকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে ডিসি অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় দুই এএসআইয়ের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান।