জনগণের মধ্যে নাগরিক বোধ সৃষ্টিতে ব্যর্থ আওয়ামী লীগ: সুলতানা কামাল

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির আলোচনা সভায় বক্তরামানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেছেন, 'আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আছে। দলটি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। অন্য যেকোনও দলের তুলনায় মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তাদের বেশি। তবে জনগণের মধ্যে নাগরিক বোধ সৃষ্টিতে দলটি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন প্রজায় পরিণত হয়েছি।’

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত যাত্রী অধিকার দিবস ঘোষণা উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সুলতানা কামাল বলেন, ‘নারীরা সম্মান নিয়ে, ধর্ষিত না হয়ে একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারবে কিনা, সেই প্রশ্ন এখন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। নারীর নিরাপত্তার দায়িত্ব এখন কে নেবে? আমরা সবাই কিন্তু অন্যের ওপর দায়িত্বটা দিয়ে দিচ্ছি। যেন নিজের কোনও দায়-দায়িত্ব নেই। রাস্তা খারাপ বলে এটা হচ্ছে, পুলিশ ওটা করছে বলে এটা হচ্ছে—এসব বলে আমরা দায়িত্ব এড়াচ্ছি। কিন্তু আমি যে অবস্থানে আছি, সেই জায়গা থেকে কী দায়িত্ব পালন করছি? দায়িত্ব এড়ানোর একটা ব্যাপার হলো সুশাসনের অভাব।’

বাস-ট্রাক মালিক সমিতিকে উদ্দেশ করে এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘আমরা বারবার শুনেছি, বাসচালকরা ট্রিপে বাস চালায়। ট্রিপের ওপরে ড্রাইভারকে পয়সা দেওয়ার সিস্টেম চালু কোন ধরনের মানসিকতা? আমরা বারবার বলেছি, আপনারা তাদের নিয়োগ দেন। একটা আন্তর্জাতিক নিয়ম আছে, বাংলাদেশ সেই সনদে স্বাক্ষর করেছে। একজন শ্রমিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করবে না। তারা আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা বিশ্রাম ও ৮ ঘণ্টা ঘুমাবে। আপনারা সেটি লঙ্ঘন করেন কেন? আপনাদের এই অপ্রশিক্ষিত চালক, লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি আগে নিয়ন্ত্রণ করেন।’

এ সময় সংসদ সদস্য মইনউদ্দিন খাঁন বাদল বলেন, ‘ভিআইপিরাই সবচেয়ে বেশি নিয়ম লঙ্ঘন করেন। তারা ক্ষমতার দম্ভ দেখান। যাদের ওপর আইন প্রয়োগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা আরও বেশি আইন লঙ্ঘন করেন। ঢাকা সিটির ফুটপাত ঠিক করে মানুষের হাঁটার উপযোগী করা জরুরি। ফুটপাত ঠিক না হওয়ার প্রধান কারণ, এখান থেকে কোনও টাকা ইনকামের রাস্তা নেই।’

আলোচনা সভা থেকে প্রতি বছর ১৩ সেপ্টেম্বর-কে 'যাত্রী অধিকার দিবস' পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন—সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসেন আহমদ মজুমদার প্রমুখ।