জুলাই আন্দোলনকেন্দ্রিক মিরপুর থানা এলাকায় মো. সাগর হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এদিন রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যখন মন খারাপ থাকতো, বা শেখ হাসিনার অবসর সময়ে তাকে গান শোনাতেন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম।
মঙ্গলবার (১৩ মে) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানার আদালতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এদিন বেলা ২টা ১৭ মিনিটে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মমতাজকে আনা হয়। এরপর তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বেলা তিনটার আগে তাকে হেলমেট, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে পুলিশের নিরাপত্তায় আদালতে আনা হয়। বেলা ৩টার দিকে তাকে এজলাসে তোলা হয়। এসময় এজলাসে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত হন। তীব্র গরমের মাঝে ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। তখন হট্টগোল শুরু হয়। মমতাজকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লেজিং করতে থাকেন অনেক। এসময় আদালতের অনুমতি নিয়ে উপস্থিত আইনজীবীদের শান্ত থাকার অনুরোধ করেন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী। এরপর তিনি আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, শুনানির সময় কেউ পাশ থেকে কথা বলবেন না। এজলাসের ভেতরে কেউ ছবি তুলবেন না। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এমন কিছু বলবেন না যাতে অডিয়েন্সে বিশৃঙ্খলা হয়। বিকাল ৩টা ৭ মিনিটে শুনানি শুরু হলে মমতাজের মাথা থেকে হেলমেট ও মুখে পরা কালো মাস্ক খোলা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম আদালতকে জানান—মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন। এরপর মহানগর প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, আমরা জাতি হিসেবে আবেগপ্রবণ। একজন ফুটবলার ভালো খেললে আমরা তার খেলাটাই দেখি। তাকে পছন্দ করার কারণ তিনি ভালো খেলেন। তেমনিভাবে নায়িকার অভিনয়, শিল্পীর ভালো গান আমরা পছন্দ করি। তারা কোন দল করে সেটা দেখা হয় না। তাদের কাজটাকে আমরা ভালোবাসি।
তবে এই আসামি জনগণের ভালোবাসাটাকে ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেন। আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব যখন আরেক রাষ্ট্রের কাছে জিম্মি, গুম, আয়নাঘর, আন্দোলন করলেই যখন গুলি করা হয়, তখন এই মমতাজ গানের ভালোবাসা দিয়ে ফ্যাসিস্টকে সহযোগিতা করেছেন। মানিকগঞ্জের সিংগাইরের মানুষের ভোট হরণ করেছেন। সংসদের অধিবেশনে যেখানে মিনিটে কোটি টাকা খরচ হয়, সেখানে তিনি গান গাইলেন—আমার নেত্রী শেখ হাসিনা, সারা বিশ্বে নাই তার তুলনা।
সংসদে তোফায়েল আহমদ, আমুসহ অন্য সিনিয়র আওয়ামী লীগের নেতারা যেখানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াদের সমালোচনা করে কটু কথা বলে নাই, সেখানে তিনি বক্তব্য রাখলেন খালেদার বাপের নাম কী? তার বাবার নাম নাকি কেউ জানে না। এসময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা ‘শেইম শেইম’ বলে স্লোগান দেন। শুনানির সময় জনাকীর্ণ এজলাসের কাঠগড়ায় পুরো সময় গালে হাত দিয়ে বিমর্ষ মনে পিপির বক্তব্য শুনতে দেখা যায় মমতাজকে।
শুনানিকালে একপর্যায়ে পিপি আদালতকে বলেন, শেখ হাসিনার অনেক কিছু তার জানা। হাসিনার যখন মন খারাপ থাকতো, বা হাসিনার অবসর সময়ে তিনি হাসিনাকে গান শোনাতেন। এসময় এজলাসে হাস্যরস তৈরি হয়। পিপির বক্তব্য শুনে মমতাজ নিজেও হাসেন।
এরপর আদালত আসামিপক্ষের বক্তব্য শুনতে চান। তখন আইনজীবীকে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় আদালতের। আসামিপক্ষে দাখিল করা নথি থেকে অ্যাডভোকেট রেজাউল করিমকে ডাকতে থাকেন আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা। এরপর মমতাজকে বিচারক জিজ্ঞেস করেন—আপনি কি ওনাকে চেনেন। আপনার আইনজীবী হিসেবে তাকে নিয়োগ করতে চাইলে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন। পরে মমতাজ তার আইনজীবীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হলে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন। তবে ওই আইনজীবী আদালতকে জানান, আজকে আমার কোনও বক্তব্য নেই।
এরপর আদালত বিকাল ৩টা ২৮ মিনিটে মমতাজ বেগমের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।