মৃত্যুপথযাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে পারে ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার’

নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত মানুষ নানা ধরনের শারীরিক-মানসিক-সামাজিক সংকটে বিপর্যস্ত ও অসহায়বোধ করে। বিশেষ ধরনের ক্যান্সার, পক্ষাঘাত অথবা এই ধরনের আরও কিছু রোগের ক্ষেত্রে সাধারণত রোগীর পরিবারকে অনেক সময় বলা হয় ‘আর কিছু করার নেই, বাড়ি নিয়ে যান’। কিন্তু ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার’ এসব রোগীকে দূরে ঠেলে না দিয়ে সহায়তার হাত বাড়ায়। মৃত্যুপথযাত্রীদের এই ধরনের ভোগান্তি কমাতে পারে এই সেবা।

বুধবার (৯ অক্টোবর) বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডি ইএমকে সেন্টারে বিশ্ব হসপাইস অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার ডে উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা জানান বক্তারা।

সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে হসপাইস বাংলাদেশ, আস্থা হসপাইস, ওয়ার্ল্ড চাইল্ড ক্যান্সার এবং ইএমকে সেন্টার। সেমিনারের শুরুতেই ‘ডেথ ক্যাফে’ শীর্ষক আলাপে মৃত্যুপথযাত্রীর অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি আড্ডার আয়োজন করা হয়।  

এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্যালিয়েটিভ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শতকরা ১০ জনের মৃত্যু হঠাৎ করেই ঘটে। আর ৯০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় নানাধরনের ভোগান্তির পর। ভোগান্তিগুলো আমাদের চোখের সামনে দিয়েই ঘটে কিন্তু আমরা বুঝতে পারি না। কারও ক্ষেত্রে অল্প কিছুদিন হয়, আবার কারও ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন হয়। ভোগান্তি বলছি এই কারণে যে- এর সঙ্গে শরীর, মন, সমাজ, আত্মা জড়িত।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভোগান্তি কমানোর জন্য দুই ধরনের পথ পৃথিবী বেছে নিয়েছে। একটি ইনস্টিটিউশনের মাধ্যমে, আরেকটি পথ হচ্ছে প্যালিয়েটিভ কেয়ার। এর ধারনাটি এরকম যে- নতুন একটি শিশু জন্মানোর সময় যেমন কাঁথা বানিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তেমনি যারা পৃথিবী থেকে বিদায়ের ক্ষণ গুণছেন তাদের জন্য সমাজ কিছুটা প্রস্তুত হতে পারে কিনা। এই সমাজটিকে আমরা বলছি মমতাময় সমাজ। এই প্যালিয়েটিভ কেয়ারের ব্যবসাটি শুধু চিকিৎসক-নার্সদের না, সমাজের প্রত্যেকের।’

ওয়ার্ল্ড চাইল্ড ক্যান্সারের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের কনসালট্যান্ট মেগান ডহারটি বলেন, ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছানো জরুরি। আমরা একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারি এক্ষেত্রে। এতে মানুষের জীবনে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে আমি মনে করি। প্যালিয়েটিভ কেয়ারে বাংলাদেশের সফলতা আমরা অন্যান্য দেশে তুলে ধরতে পারি।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাস্থ্য সচেতনতায় যোগ ব্যায়ামের উপকারিতা তুলে ধরেন জয়সান ইয়োগা অ্যান্ড অয়েলনেস সেন্টারের প্রশিক্ষক শর্মিষ্ঠা সরকার। দেহ ও মনের বিষাদ দূর করতে সংগীতের ভূমিকা তুলে ধরেন ইউল্যাবের শিক্ষক মিন্টু কৃষ্ণ পাল।  

সেমিনারে বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী আমিনা আহমেদ বলেন, ‘যোগ ব্যায়াম একটি আধ্যাত্মিক বিষয়। আমরা ধ্যান করি, আমাদের চারপাশে জীবনীশক্তি অবস্থান করায় আমরা সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ধ্যানের মাধ্যমে আমরা এই শক্তিগুলোকে একটি রাস্তা করে দেই। হিলিং ২১ দিন করতে হয়, এর মধ্যে টানা ৩ দিন অবশ্যই করতে হয়। রেকি ২ করার পর রেকি ৩ করতে হয়।’

শিশুর মৃত্যু কীভাবে গ্রহণযোগ্য হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিশুর মৃত্যুকে মেনে নিতে হবে। সবকিছু ক্ষণস্থায়ী, আমাদের সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে একদিন, এটা মনে রাখতে হবে। তাই আমরা অসুস্থ শরীর নিয়ে ভোগান্তির চেয়ে কীভাবে নিজেদের সুস্বাস্থ্য ধরে রাখা যায় সেটা নিয়ে ভাবি।’   

সেমিনারে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিষয়ে আরও বিস্তারিত তুলে ধরেন অ্যাপোলো হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা ফেরদৌস শাহরিয়ার, স্কয়ার হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের সমন্বয়ক অধ্যাপক সৈয়দ আকরাম হোসেন, বাংলাদেশ প্যালিয়েটিভ অ্যান্ড সাপরটিভ কেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ডা রুমানা দৌলা প্রমুখ।