যশোরের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পাঁচ আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ

সুপ্রিম কোর্ট

১৯৯৫ সালে যশোর জেলার কেশবপুরের মহাদেবপুর গ্রামের আব্দুস সামাদ হত্যা মামলায় পাঁচ আসামির জামিন বাতিল করে তাদেরকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে আপিল আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (১৪ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেব নাথ। আর বাদী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান রুবেল। অন্যদিকে, আসামিদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএম আমিন উদ্দিন।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাত একটার দিকে যশোর জেলার কেশবপুরের মহাদেবপুর গ্রামের আব্দুস সামাদের ঘরে অস্ত্রসহ একদল দুর্বৃত্ত প্রবেশ করে এবং ঘর থেকে  তাকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির মো. নজর আলী শেখ তার ছেলে সামাদকে মমিনপুর বেসরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন।  দুই পায়ের হাটুর নিচে গুরুতর কাটা, রক্তাক্ত, জখম এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় উদ্ধার করে সামাদকে কেশবপুর সরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে খুলনার ২৫০ বেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। পরদিন (২ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৬টা ২০ মিনিটে তাকে খুলনার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন সকাল ৭টা ২০ মিনিটে তিনি মারা যান।

এরপর ৩ ফেব্রুয়ারি সামাদের বাবা বাদী হয়ে সাত জনকে আসামি করে কেশবপুর থানায় হত্যা মামলায় দায়ের করেন। এ অবস্থায় মামলা তুলে নিতে বাদীর পরিবারের ওপর সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে হামলা চালালে স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে তারা ফিরে যায়। এদিকে মামলাটির তদন্ত শেষে ১৯৯৬ সালের ২৩ জানুয়ারি ১২ জনকে অভিযুক্ত করে পুলিশ চার্জশিট দাখিল করে।

এ মামলার আসামিরা হলো— রফিক ওরফে রফিকুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন, সিরাজুল ইসলাম, দ্বীন মোহাম্মাদ ওরপে দ্বীনু ওরফে মিন্টু, শাহাদাৎ ওরফে মেঝ, রাজ্জাক, তোরাপ, জাকির হোসেন, সোহরাব হোসেন, রাজ্জাক কাগুচি, রফিক এবং আমজাদ হোসেন। তবে মামলা চলাকালে আসামি আমজাদের মৃত্যুর কারণে তার নাম চার্জশিট থেকে বাদ পড়ে।

মামলার পর এজাহারভুক্ত আসামি আলতাফ ও রফিকুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে  ৯ মাস জেল খেটে রফিকুল জামিনে বের হয়ে যায়। এছাড়াও পরবর্তীতে আসামি রাজ্জাক, সোহরাব, জাকির এবং তোরাব জামিন নিয়ে বেরিয়ে যায়। এরপর থেকে আসামি আলতাফ, রফিকুল,রাজ্জাক, সোহরাব, জাকির এবং তোরাবকে আর জেল খাটতে হয়নি। পাশাপাশি আলতাফ কারাগারে থাকাবস্থায় মারা যায়। 

যশোরের দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে মামলার বিচার শুরু হলেও পরবর্তীতে মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৯ আগস্ট অভিযুক্ত ১১ আসামিকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়ে ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে মামলা তুলে নিতে বাদীর পরিবারের ওপর হামলার ঘটনায় প্রত্যেক আসামিকে ১০ বছরের সাজা ও জরিমানা দেওয়া হয়।

পরে ওই একই বছর রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা হাইকোর্টে আপিল আবেদন করে।  আসামি রফিকুল, রাজ্জাক, সোহরাব, জাকির এবং তোরাব আপিল শুনানি চলাকালে ২০১৬ সালে হাইকোর্ট থেকে জালিয়াতি করে জামিন নেয়। জামিনের নথিতে তারা ৯ মাসের জেলের থাকার তথ্য ৯ বছর দেখিয়ে জামিন পায়। পরে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ওই জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে আসামিদের জামিন স্থগিত করে তাদেরকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

আপিলের আদেশের পর আসামিরা আত্মসমর্পণ করলে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারিক আদালত। এরপর দীর্ঘ ২ বছর ৫ মাস কারাভোগের পর আসামিরা পুনরায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানায় এবং চলতি বছরের ১৫ মে জামিন পেয়ে তারা কারাগার থেকে বের হয়ে যায়। তবে ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল দায়ের করে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ  সোমবার (১৪ অক্টোবর) আপিল বিভাগের শুনানি শেষে মামলার ওই পাঁচ আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।/