তিন কুকুরের রহস্যজনক মৃত্যু, নিখোঁজ আরও আটটি

২৩৪




রাজধানীর পূর্বাচল পিংক সিটি আবাসিক এলাকায় তিনটি পোষা কুকুরের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও নিখোঁজ রয়েছে আরও আটটি কুকুর। মৃত তিন কুকুরের দুটির মালিক চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহনেওয়াজ কাকলী এবং অপরটির মালিক আবাসিকের বাসিন্দা ও অ্যানিমেল লাভার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সাদিয়া সালমা সিদ্দিকা সাথি। তাদের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে বিষ প্রয়োগ করে এই কুকুরগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। 

এই ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেছে সাদিয়া সালমা সিদ্দিকা সাথি। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে দুটি কুকুরের (মিল্কি ও লিও) দেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার সেন্ট্রাল ভেটেরিনারি হসপিটালে (কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতাল) পাঠানো হয়েছে। এর আগে, মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) থেকে বুধবার (৬ নভেম্বর) পর্যন্ত এই কুকুরগুলোর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। 

তাদের অভিযোগ, তিনটি কুকুর একইভাবে মারা গেছে। শরীরের কোথাও কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যাযনি। তবে মৃত্যুর পর কুকুরগুলোর মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিলো। আমরা ধারণা করছি, ওদের বিষাক্ত কিছু খাইয়ে মারা হয়েছে। পিংক সিটির ভেতরের বাসিন্দাদের কেউ এই কাজ করেছে বলে আমরা সন্দেহ করছি।

চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহনেওয়াজ কাকলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কেউ রাস্তার কুকুরও মেরে ফেলাল অধিকার রাখে না। সেখানে গৃহপালিত প্রাণী হত্যা করা বিশাল অপরাধ।’

তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাটার (কুকুরটি) শুয়ে ছিল। ডাক দিলাম, একবার লেজ নেড়ে সায় দিল, কিন্তু ওঠেনি। কাছে গিয়ে ধরলাম, ও টয়লেট করলো, একটু রক্ত প্রস্রাব করলো। আমি পানি খাওয়ালাম। ওর শ্বাস নিতে তখন কষ্ট হচ্ছিলো, মুখে হাওয়া দিচ্ছিলাম। কিন্তু ১০ মিনিটের মধ্যে ও আমাদের ছেড়ে চলে গেল। শরীরে দেখলাম কোথাও কোনও জখম নেই। কিন্তু মৃত্যুর সময় মুখ থেকে রক্ত বের হচ্ছিলো।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেছি। ৫ নভেম্বর বেলা ১১টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পিংক সিটির সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ ছিল। আমরা ধারণা করছি, ওই সময়ের মধ্যে কে বা কারা কুকুরগুলোকে বিষ প্রয়োগ করেছে।’

এ বিষয়ে পিংক সিটি আবাসিক এলাকার ম্যানেজমেন্ট কমিটির হিসাবরক্ষক মো. মিরাজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পিংক সিটিতে মোট ২৪০টি বাড়ি রয়েছে। এসব বাড়ির নিরাপত্তায় মাত্র ২০টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। তবে কিছুদিন ধরে সবগুলো ক্যামেরা একসঙ্গে কাজ করে না। মেরামতের পর ১৩টি সিসিটিভি ক্যামেরা এখন সচল রয়েছে। নষ্ট না হলে ক্যামেরা বন্ধ থাকে না। আর কুকুরগুলোর কীভাবে মারা গেছে, সেটিও আমরা জানি না। তবে খবরটি শুনে খুবই খারাপ লাগছে।’

১২৩

সাধারণ ডায়েরি (জিডি)

কুকুরের অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ নিখোঁজের বিষয়ে রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেন পিংক সিটি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ও অ্যানিমেল লাভার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সাদিয়া সালমা সিদ্দিকা সাথি।

বলা হয়, পিংক সিটি আবাসিক এলাকায় আমার আবাসস্থলে দীর্ঘদিন ধরে ৮টি কুকুর বসবাস করে। তবে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরের পর থেকে সবগুলো নিখোঁজ রয়েছে। আমার ধারনা, বেআইনিভাবে কুকুরগুলোকে কে বা কারা অপসারণ অথবা হত্যা করেছে। যা বাংলাদেশ প্রাণী কল্যাণ আইনে-২০১৯ ভঙ্গের লক্ষণ।

তিনি জিডিতে আরও উল্লেখ করেন, কিছুদিন আগে হাবিব আহমেদ নামে একজন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সব কুকুর মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এরপর মঙ্গলবার বেলা ১২টা ১৩ মিনিটে আবারও ওই ব্যক্তি একই হুমকি দেয়। একই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অন্য একটি কুকুরকে অস্বাভাবিকভাবে মেরে ফেলা হয়েছে। পরদিন আরও দুটি কুকুরের মুত্যু হয়। আমরা এই কুকুরগুলোর অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ জানতে তাদের ময়নাতদন্ত জরুরি বলে মনে করছি।

এ বিষয়ে সাদিয়া সামলা সিদ্দিকা সাথি বলেন, ‘হাবিব আহমেদ নামে ওই ব্যক্তি হুমকিতে বলেছিল- কুকুর তো যাবে যাবেই, আপনাকেও দেখে নেবো, র‌্যাব-পুলিশ দিয়ে আপনাকে ধরে নেওয়া হবে।’


পুলিশ যা বলছে

তদন্ত কর্মকর্তা ও খিলক্ষেত থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সজল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজধানীর পিংক সিটিকে কয়েকটি কুকুর নিখোঁজ রয়েছে এবং তিনটি কুকুরের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এই সংক্রান্তে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করা হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দুটি মৃত কুকুর উদ্ধার করেছি। তবে কী কারণে কুকুরগুলোর মৃত্যু হয়েছে তা প্রাথমিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মৃত দুটি কুকুরের ময়নাতদন্তের জন্য পুরান ঢাকার সেন্ট্রাল ভেটেরেনারি হসপিটালে (কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতাল) পাঠানো হয়েছে। ময়নাতন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে কুকুরগুলোর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানা যাবে। এছাড়াও ঘটনার তদন্ত করছি। যদি কুকুরগুলোর মৃত্যুর পেছনে কারও হাত থাকে, তবে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’