চা বিক্রেতা স্বপনের পাশে দাঁড়ালেন ঢাবির শিক্ষার্থীরা

‘টিএসসি স্ট্যান্ডস ফর স্বপন মামা’ ব্যানারে চা বিক্রেতা স্বপনের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি’র সব সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন।

৪০ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে চা বিক্রি করেন স্বপন। সবার কাছে তিনি ‘স্বপন মামা' নামেই পরিচিত। এক বছর আগে মেয়েকে ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো তিনি এখন মামলার আসামি হয়েছেন। ফলে পরিচয় আর গোপন না করে প্রকাশ্যে এসে ধর্ষকের বিচার দাবি করছেন তিনি। এ ঘটনায় তার পাশে দাঁড়িয়েছেন ডাকসুর নেতারাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিভিত্তিক সব সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। ‘টিএসসি স্ট্যান্ডস ফর স্বপন মামা’ এই ব্যানারে তারা ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং স্বপন মামার বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা।

ঘোষিত কর্মসূচি হলো বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর ১টায় সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন, বিকাল তিনটা থেকে টিএসসিভিত্তিক সকল সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণে আয়োজিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিবাদ কর্মসূচি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সাংবাদিক সমিতির সভাপতি রায়হানুল ইসলাম আবির। তিনি বলেন, ‘স্বপন মামার মেয়ে, আমাদের ছোট বোনের সঙ্গে ঘটে যাওয়া পৈশাচিক অপরাধের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক বিএম জুবলি রহমান। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত ধর্ষকের জামিন বাতিল ও তার দায়ের করা মিথ্যা, হয়রানিমূলক মামলা থেকে স্বপন মামাসহ অভিযুক্তদের অব্যাহতি দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর সহ-সাধারণ সম্পাদক(এজিএস) সাদ্দাম হোসেন, সদস্য তানভির হাসান, রাইসা নাসের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি আব্দুল্লাহ ফয়সালসহ টিএসসিভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠনের অর্ধ-শতাধিক নেতাকর্মী। এসময় ‘স্বপন মামা’ নিজেও উপস্থিত ছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার মেয়েকে ধর্ষণ ও ধর্ষকের দ্বারা উল্টো মামলার শিকার হওয়ার ঘটনার ন্যায্যবিচার দাবি করেন।

উল্লেখ্য, প্রায় এক বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের বাসুদেব গ্রামে চা বিক্রেতা স্বপনের বাকপ্রতিবন্ধী মেয়ে (২০) ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত বাচ্চু মিয়ার (৫০) নামে মামলা করেন স্বপনের স্ত্রী রহিলা। এক বছর জেলে থাকার পর জামিনে এসে জলিল মিয়া ও তার পরিবারের পাঁচজনের নামে পাল্টা দুটি মামলা করেন বাচ্চু মিয়া। ওই মামলার আসামি হয়ে এখন পথে পথে ঘুরছেন তার পরিবার। গরিব হওয়ায় মামলার খরচ চালাতেও হিমশিম খাচ্ছে পরিবারটি। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হলে এর প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন তখন পৃথক ব্যানার নিয়ে নিজের প্রতিবন্ধী মেয়েকে ধর্ষণের বিচার চেয়ে ব্যানার নিয়ে বসেছিলেন চা বিক্রেতা স্বপন। টিএসসি’র বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী ও ডাকসু’র নেতারা তখন বিষয়টি অবগত হয়ে তার পাশে থাকার আশ্বাস দেন।