লিখিত নির্দেশনা ছাড়া এমপি-মন্ত্রীর নির্দেশে পরিচালিত হবেন না : ইউএনও’কে হাইকোর্ট

হাইকোর্ট

বিচারাধীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করায় নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ইউএনও সোহাগ হোসেনকে উদ্দেশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, আপনারা (ইউএনও) প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তাই মন্ত্রী, এমপি কিংবা উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশে পরিচালিত হবেন না।

একইসঙ্গে বিচারাধীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করায় ইউএনও সোহাগ হোসেন এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক হারুনুর রশিদ ক্ষমা প্রার্থনার পর তাদের ভর্ৎসনা করেছেন হাইকোর্ট। তাদেরকে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়ে লিখিত বক্তব্য দাখিলের নির্দেশ দিয়ে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি আবারও হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে অধ্যক্ষ নার্গিস আক্তারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক রাজু। ইউএনও সোহাগ হোসেনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কাজী সাজোয়ার হোসেন।  শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক হারুনুর রশিদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহিয়া দুলাল।

এর আগে আদালতের তলব আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে হাজির হন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ হোসেন এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক হারুনুর রশিদ। তারা হাজির হয়ে বিচারাধীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করায় হাইকোর্টের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

পরে ইউএনও সোহাগ হোসেনকে উদ্দেশ করে হাইকোর্ট বলেন, ‘আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী চলবেন। কিন্তু অন্য কোনও মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যান অন্য কোনও নির্দেশনা দিলে তাদের কাছে লিখিত নির্দেশনা চাইবেন। আপনাদের (ইউএনও), প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার জন্যই লিখিত নির্দেশনা চাইবেন। আপনারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।’

আদালত আরও বলেন, স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ার‌ম্যান বললেই সেটা করতে হবে? আপনারা কি প্রমোশনের জন্য এসব করেন? আপনারা বিসিএস উত্তীর্ণ অফিসার। স্থানীয় রাজনীতিতে জড়াবেন না। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করুন। প্রমোশন এমনি হয়ে যাবে। ইউএনও  কবি নজরুল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নার্গিস আক্তারকে বলেছিলেন, ‘আপনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নাকি, কিছু হলেই হাইকোর্ট দেখান?’, এ প্রসঙ্গটি তুলে আদালত ইউএনও সোহাগ হোসেনের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা যদি এ মামলার আদেশের কপি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাই, তাহলে কেমন হবে?’

প্রসঙ্গত, এর আগে স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর অভিপ্রায়ে কবি নজরুল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করা হয়। সে আদেশটি চ্যালেঞ্জ করে কমিটির সভাপতি ইকবাল পারভেজ হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। হাইকোর্ট শুনানি নিয়ে কমিটি বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন এবং কলেজ পরিদর্শক এবং ইউএনওকে ম্যানেজিং কমিটির কোনও কাজে হস্তক্ষেপ না করে তাদের সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন। কিন্তু, আদালতের সেসব নির্দেশনা অমান্য করে ওই কলেজে নারগিস আক্তারকে কিভাবে ম্যানেজিং কমিটি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিলো সে বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ চিঠি ইস্যু করেন এবং বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। উপজেলার নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর গত ২৩ জানুয়ারি এসএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত মিটিংয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অসৌজন্যমূলক আচরণ করে বলেন, ‘আপনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নাকি, কিছু হলেই হাইকোর্ট দেখান?’

পরে একটি সম্পূরক আবেদনের মাধ্যমে বিষয়টি আদালতকে জানানো হয়। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ইউএনও সোহাগ হোসেন এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক হারুনুর রশিদকে আজ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) তলব করেছিলেন।