বঙ্গবন্ধু ও মুক্তি সংগ্রামের উপস্থাপনায় অন্যরকম বইমেলা প্রাঙ্গণ

2বইমেলায় শুরু হয়েছে ২ ফেব্রুয়ারি। মুজিববর্ষের এই বইমেলাজুড়েই আছে বঙ্গবন্ধুকে উপস্থাপন ও অনুধাবণের আবহ। মেলাটিও উৎসর্গ করা হয়েছে তাঁকে। মেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা বই যেমন বেরিয়েছে তেমনই তার জীবন ও কর্মভিত্তিক বইয়ের প্রকাশনাও আসছে, আসবে। তবে বইমেলার প্রাঙ্গণেও বঙ্গবন্ধুর প্রতি নিবেদন কম নয়। যেমন টিএসসি থেকে প্রথম গেট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী অংশের বই মেলায় ঢুকতেই চোখে পড়বে সংগ্রাম চত্বর। এখানে চোখ রাখুন। দেখতে পাবেন ১৯৪৭ সালে কলকাতার ছাত্রসভায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতা থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ পর্যন্ত সংগ্রামের বিষয়গুলো। এই চত্বর দেখলেই এক ঝলকেই দর্শনার্থীদের চোখে ফুটে উঠবে পুরো সংগ্রামের চিত্রটি।

6বঙ্গবন্ধুকে নিবেদনের এটি একটি অংশ মাত্র। মেলা প্রাঙ্গণটি এভাবে চারটি অংশে বিভক্ত। এগুলোর নামকরণ করা হয়েছে: শিকড়, সংগ্রাম, মুক্তি এবং অর্জন। শিকড়ে আছে বাংলার ইতিহাস; সংগ্রাম মূলত বাঙালিদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর মমত্ববোধ এবং আন্দোলন সংগ্রামে দেশ স্বাধীন করার ডাক,  মুক্তি অংশে প্রতিফলিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভের বিষয়টি। আর অর্জন হচ্ছে দু’হাত ভরে পাওয়া।

বাংলা একাডেমির সামনের অংশ দিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে অর্জন চত্বর। এখানে উৎকীর্ণ হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অমূল্য অর্জনগুলো। ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর অফ লজ ডিগ্রি অর্জন থেকে শুরু করে ২০১৫ সালের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শেখ হাসিনার 'দেশরত্ন' উপাধিতে ভূষিত হওয়া পর্যন্ত সকল অর্জনের বিষয় উল্লেখ আছে এখানে।

5বইপ্রেমীদের প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলা। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) মেলার দ্বিতীয় দিন ঘুরে দেখা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারের মেলার আয়োজন হলেও দর্শকদের প্রশান্তির জায়গা হয়েছে এটি। প্যাভিলিয়ন এবং স্টল নির্দিষ্ট দূরত্বে তৈরি করা হয়েছে। মেলায় চলাচলের রাস্তাগুলো করা হয়েছে প্রশস্ত। বিশ্রামের জন্য বিভিন্ন দিকে বসার জায়গাও তৈরি করা হয়েছে। আর বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর ভিত্তি করে চারটি বিন্যাসে চারটি চত্বর তৈরি করা হয়েছে।

1পুরো মেলার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, মেলার বেশিরভাগ স্টলেই রয়েছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর লোগোটি। স্টলগুলোর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মুজিববর্ষ কে উৎসর্গ করতেই তাদের এই ছোট্ট প্রয়াস।

এবারের মেলায় রাস্তাগুলো প্রশস্ত করায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন মেলায় আসা ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। স্বাধীনতা স্তম্ভের জলধারার দক্ষিণ এবং পশ্চিম অংশ নেওয়ার ফলে দর্শনার্থীরা ক্লান্ত হয়ে গেলেও বসার সুযোগ পাচ্ছেন। এমন সুযোগ আছে মেলার বিভিন্ন অংশে।

3মেলার দর্শনার্থী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শামীম আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অন্যান্য বারের তুলনায় এবারের রাস্তা প্রশস্ত। এটা প্রশান্তিদায়ক একটা বিষয়। আর স্টলগুলো নির্দিষ্ট দূরত্বে হওয়ায় সবকিছু গোছানো লাগছে। সবমিলিয়ে ভালোই লাগছে।

বই মেলা ঘুরে দেখা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে রয়েছে শিশু চত্বর, পুলিশের কন্ট্রোল রুম, ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুম, ব্লাড ব্যাংক, মসজিদ ও ফুড কোর্ট। আর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চ, মিডিয়া সেন্টার, বঙ্গবন্ধু জাদুঘর বিভিন্ন সংস্থার স্টল।

4বইমেলার সাজসজ্জার বিষয়ে জানতে চাইলে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বইমেলার ডিজাইনটি করেছেন এনামুল করিম নির্ঝর। অনেক সুন্দর করে তিনি ডিজাইন করেছেন। এবারের বইমেলাটি আমরা বঙ্গবন্ধুর নামে উৎসর্গ করেছি। এত বড় একজন নেতার নামে শুধু উৎসর্গ করলে হবে না, তার জীবনের বিষয়গুলো ফুটিয়ে তুলতে হবে। আর সেটা তো সাধারণভাবে তুললে হবে না। তাই মেলা প্রাঙ্গণটিকে আমরা চারটি অংশে বিভক্ত করেছি। সেগুলো হচ্ছে শিকড়, সংগ্রাম, মুক্তি এবং অর্জন। এগুলোর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবনের বিভিন্ন অংশকে আমরা চিত্রিত করার চেষ্টা করেছি।