‘তদন্তের স্বার্থে’ সাংবাদিকদের তথ্য দেবে না ওয়েস্টিন

হোটেল ওয়েস্টিন ও শামীমা নূর পাপিয়া
নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেতা শামীমা নূর পাপিয়া ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের ঘটনায় কোনও ধরনের মন্তব্য করবে না বা সাংবাদিকদের কোনও তথ্য দেবে না ঢাকা ওয়েস্টিন হোটেল কর্তৃপক্ষ। আইনানুগ তদন্তের স্বার্থে ও নীতিগত কারণে এই অবস্থান নেওয়ার কথা জানিয়েছে তারা। তবে পাপিয়ার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সব ধরনের তথ্য দেওয়া হচ্ছে বলে জানায় হোটেল কর্তৃপক্ষ।  

পাঁচ তারকা এই হোটেলে মাসের পর মাস অবস্থান করেছেন শামীমা। অভিযোগ উঠেছে, ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট ভাড়া নিয়ে দেহ ব্যবসা চালিয়ে তিনি যে আয় করতেন, তা দিয়ে শুধু হোটেল বিলই দিতেন কোটি টাকার বেশি। ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে পাপিয়ার অবস্থান করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হোটেল কর্তৃপক্ষ ই-মেইলের মাধ্যমে প্রশ্ন চায়। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) কয়েকটি প্রশ্ন ওয়েস্টিন কর্তৃপক্ষের ই-মেইলে পাঠানো হয়। একদিন সময় নিয়ে বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ফিরতি ই-মেইলের মাধ্যমে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা ওয়েস্টিন হোটেলের মার্কেটিং কমিউনিকেশনের সহকারী পরিচালক সাদমান সালাউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ঘটনা সম্পর্কে অবহিত আছি। আমাদের কঠোর নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা এই ধরনের ঘটনার জন্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চলমান তদন্তে সহায়তা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সমস্ত ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়ানো হয়েছে। একটি অতিথিসেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে, সব অতিথির সুরক্ষা এবং গোপনীয়তা আমাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয়। সংশ্লিষ্ট ঘটনার আইনানুগ তদন্তের প্রেক্ষিতে বর্তমানে হোটেল কর্তৃপক্ষ কোনও ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবে।’

র‍্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পাপিয়া-মতি সুমন দম্পতির সুনির্দিষ্ট কোনও পেশা নেই। ঢাকা ও নরসিংদীতে তাদের গাড়ির শোরুম ও কার ওয়াশ সলিউশন সেন্টার থেকে বাৎসরিক আয় ১৯ লাখ টাকা। প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাপিয়া ও তার স্বামী মতি সুমনের অনেক অপকর্মের তথ্য পাওয়া গেছে। তারা ঢাকা ও নরসিংদী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, প্রতারণা করে অঢেল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া তাদের আয়ের অরেকটি উৎস হলো নারীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করানো। সাত নারীকে এ কাজে ব্যবহার করতেন পাপিয়া। এছাড়া হোটেল ওয়েস্টিনে সবসময় পাপিয়ার নামে একটি প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট বুক থাকতো। সর্বশেষ গত বছরের ১২ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৫৯ দিন ঢাকা ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে অবস্থান করেন পাপিয়া ও তার সহযোগীরা। সেখানে আনুষঙ্গিক খরচসহ পাপিয়া সর্বমোট ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৮ টাকা নগদ পরিশোধ করে।

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওই পাঁচ তারকা হোটেল কর্তৃপক্ষ আমাদের তথ্য দিয়ে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। ঢালাওভাবে হোটেল কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করতে পারি না। কারণ হোটেলের কাজই ব্যবসা করা।  অভিযোগের ভিত্তিতে পাপিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি বর্তমানে তদন্তাধীন।’

প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ চার জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব ১-এর একটি দল। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলো পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)। তারা অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, নানা অনৈতিক কাজ, জালনোট সরবরাহ, রাজস্ব ফাঁকি ও অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বলে জানায় র‍্যাব।

গ্রেফতারের পর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে হোটেল ওয়েস্টিনে পাপিয়ার নামে বুকিং করা বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট এবং ফার্মগেট এলাকার দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে র‍্যাব আরও একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি ব্যাংক চেকবই, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করে।

আরও পড়ুন- 

র‌্যাবকে তথ্য দিচ্ছে ওয়েস্টিন

পাপিয়ার বিরুদ্ধে ৩ মামলা

পাপিয়ার অবৈধ সম্পদের খোঁজ নিচ্ছে দুদক