টাকা ওড়ানোর ছবি ভাইরাল, যা বললেন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা

ছিটানো টাকা কুড়াচ্ছে মানুষরাজধানীতে করোনাভাইরাসের ফলে কর্মহীন হয়ে পড়া নাগরিকদের মাঝে টাকা ছিটিয়ে অনুদান দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ এমদাদুল হক। টাকা ছিটানোর কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা বলছেন, ত্রাণ বিতরণের নামে এমন আচরণ করে নাগরিকদের সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তার এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।



সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, একটি কালো রঙের পাজেরো গাড়ি। ভেতর থেকে কেউ একজন টাকা বিলাচ্ছেন। খেটেখাওয়া ও দরিদ্র শ্রেণির অনেক মানুষ সেই গাড়ির জানালা দিয়ে টাকা নেওয়ার জন্য উপচে পড়ছেন। অপর দুটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মাটিতে অনেক টাকা পড়ে রয়েছে। দরিদ্র শ্রেণির সেসব মানুষ ওই টাকাগুলো কুড়িয়ে নিচ্ছেন।
জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব শাহ মোহাম্মদ এমদাদুল হক সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করছেন। তারই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার নগরীর সায়েন্সল্যাব থেকে নিউমার্কেট ও ঢাকা কলেজ এলাকার সড়কে দরিদ্র মানুষের মাঝে নগদ টাকা বিতরণ করতে বের হন তিনি। টাকা বিতরণের একপর্যায়ে মানুষের ভিড়ে দিশেহারা হয়ে ওঠেন এমদাদুল হক। পরে রাজপথে ১০০ টাকার বান্ডেল ছুড়ে মারেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে নোটগুলো কুড়িয়ে নিতে হতদরিদ্র লোকজন লেগে যায় কাড়াকাড়িতে। এমন দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে।
টাকা নিতে মানুষের প্রাণপণ চেষ্টাতবে বিষয়টিকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখছেন এমদাদুল হক। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো গত কয়েকদিন ধরে সাধারণ মানুষের মাঝে অর্থ বিতরণ করে আসছি। কিন্তু কেউ তো সেগুলো নিয়ে একটি নিউজও করেনি। এই ঘটনায় নিউজ করা কি ঠিক হয়েছে?’
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সায়েন্স ল্যাব থেকে ঢাকা কলেজ পর্যন্ত এলাকায় দরিদ্র মানুষকে অর্থ বিতরণ করেছি। এ সময় একজন পুলিশ অফিসারও ছিলেন। মানুষ আমার গাড়ির ওপর আছড়ে পড়ে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আমি আমার ড্রাইভারকে দ্রুত চলে যেতে বলি। কিন্তু আমরা যেতেও পারছি না। চারদিকে মানুষ। তখন আমার হাত গাড়ির বাইরে ছিল। একপর্যায়ে হাত থেকে টাকা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি।’
টাকা কুড়াচ্ছে মানুষপ্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। আরাফাত ইসলাম ভূঁইয়া নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, বাদশাহী কারবার! ক্ষুদার্ত প্রজাদের উদ্দেশে বাদশাহ মোহর ছড়াচ্ছেন! এ সমাজ নষ্ট হয়েছে অনেক আগেই, এখন শুধু বিকারগ্রস্তের সংখ্যা বাড়ছে।’
মাহমুদ আলী নামে অপর একজন লিখেছেন, ‘গত কিছুদিন সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন স্তরের কিছু অফিসারদের কাণ্ডকারখানা দেখে চিন্তিত না হয়ে থাকা যায় না। সচিব, অতিরিক্ত সচিব, ডিসি এ পর্যন্ত…হয়ে গেলেন। কী ট্রেনিং হয়, এদের কারা দেয় ওরিয়েন্টেশন! সরকারের জনগণের সর্বোপরি দেশের সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে।’
এ বিষয়ে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমি গণমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি। এটা কীভাবে, কেন করা হলো, আমি খতিয়ে দেখবো।’

ছবি: ইন্দ্রজিৎ কুমার ঘোষ (ফটো সাংবাদিক: নিউএজ)