আজানের আগেই মসজিদে মুসল্লিরা!




1রাজধানীর মিরপুর পাইকপাড়ার শাহ সাহেব নগর জামে মসজিদের মাইকে ১২টার দিকে ঘোষণা দেওয়া হলো, ‌‘আজান হবে ১টায়, খুতবা শেষে জুমার নামাজ হবে ১টা ৪৫ মিনিটে। মুসল্লিরা যেন বাসায় ওজু করে, সুন্নত নামাজ পড়ে আসেন।’ একই ঘোষণা বারবার জানানো হয় মসজিদের মাইকে। তবে এ ঘোষণার পরেও অনেক মুসল্লি সাড়ে ১২টা থেকেই মসজিদে আসা শুরু করেন। মসজিদেই ওজু করে সুন্নত নামাজ পড়েন তারা।

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে অনেক মসজিদেই এমন ঘোষণার পরেও তা মানেননি মুসল্লিরা। অন্যদিকে আলেমদের পরামর্শে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) বয়স্ক ও শিশুদের মসজিদে না আসার আহ্বান জানালেও তারও প্রতিফলন দেখা যায়নি। প্রায় সব মসজিদেই ছিল বৃদ্ধ ও শিশুদের উপস্থিতি।

2আলেমদের পরামর্শে ইসলামিক ফাউন্ডেশন জুমার নামাজ ও জামাতে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ সীমিত করার কথা বললেও তা মানা হচ্ছে না। বরং অনেক মসজিদের ভেতরে মুসল্লিদের জায়গা না হওয়ায় রাস্তায় নামাজ পড়তেও দেখা গেছে। এছাড়া, জুমার বয়ান, খুতবা, জামাত ও দোয়া সংক্ষিপ্ত করা, জামাতের কাতারে ফাঁক ফাঁক হয়ে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না। তবে কোনও কোনও মসজিদের প্রবেশমুখে মুসল্লিদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও ওজুখানায় সাবানও দেওয়া হয়।

রাজধানীর মিরপুর, শ্যামলী, শুক্রাবাদ, মগবাজার, সার্কিট রোড, পল্টন, বায়তুল মোকাররম, ধানমন্ডি, কলবাগান এলাকার মসজিদগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অনেক বয়স্ক মানুষ জুমার জামাতে অংশ নিতে মসজিদে গিয়েছেন। অনেকেই সঙ্গে নিয়ে গেছেন শিশুদের। এছাড়া নামাজের আগে ও শেষে মুসল্লিদের অনেককেই জড়ো হয়ে গল্প করতেও দেখা গেছে। কোনও কোনও মসজিদের সামনে জড়ো হয়েছেন ভিক্ষুকরাও। বেশিরভাগ মুসল্লির মধ্যেই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা মানার আগ্রহ দেখা যায়নি।

তবে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবার মুসল্লি কম ছিল। তবে সেখানেও বয়স্কদের উপস্থিতি ছিল বেশি। নাজিমউদ্দিন নামের এক বয়স্ক মুসল্লি বলেন, ‘আমার বয়স হয়েছে ঠিকই, তবে আমি তো অসুস্থ না। আমি কেন মসজিদে আসবো না? আর আমি আল্লাহকে ভয় পাই, করোনাকে না। সরকার তো মসজিদ বন্ধ করেনি, তাহলে আমি আসলে সমস্যা তো নাই।’

রাজধানীর হাইকোর্ট মাজার মসজিদের বাইরে দেখা গেছে সাহায্যের আশায় শতাধিক দরিদ্র মানুষ ভিড় করেছেন। কোনও রকম দূরত্ব বজায় না রেখেই তাদের ভিড় করতে দেখা যায়। অনেক মুসল্লি নামাজ শেষে তাদের সাহায্যও করেছেন।

3প্রসঙ্গত, গত ২৪ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশন দেশের খ্যাতনামা আলেমদের সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিরাজমান পরিস্থিতিতে জনগণের সুরক্ষা বিষয়ে বৈঠক করে। সেই বৈঠকে আলেমরা মসজিদগুলোতে জুমার নামাজ ও জামাতে মুসল্লিদের সীমিত রাখার পরামর্শ দেন। এরপর ২৯ মার্চ আলেমদের নিয়ে ফের বৈঠক করে ইফা। পরে ইফার পক্ষ থেকে জানানো হয়, মসজিদে নিয়মিত আজান, ইকামত, জামাত ও জুমার নামাজ অব্যাহত থাকবে। যারা জুমা ও জামাতে যাবেন তারা সবাই যেন যাবতীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা অবলম্বন করেন। ওজু করে নিজ নিজ ঘরে সুন্নাত ও নফল আদায় করবেন। শুধু জামাতের সময় মসজিদে যাবেন এবং ফরজ নামাজ শেষে দ্রুত ঘরে চলে আসবেন। তবে এসবের তেমন কোনও প্রতিফলন দেখা না যাওয়ায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


ছবি: চৌধুরী আকবর হোসেন ও নাসিরুল ইসলাম