অনলাইনে মামলা গ্রহণ: বরগুনার এসপির প্রশংসা করে মানবাধিকার কমিশনের চিঠি

আমতলী থানায় আসামির ঝুলন্ত লাশ




বরগুনার আমতলী থানায় পুলিশ হেফাজতে শানু হাওলাদারের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় ই-মেইলে পাঠানো অভিযোগের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করেছেন বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন। এ ঘটনার প্রশংসা করে তাকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।


শনিবার (৪ এপ্রিল) বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে গত ৩ এপ্রিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (প্রশাসন) কাজী আরফান আশিকের স্বাক্ষরের পর এসপি বরাবর ওই চিঠি পাঠানো হয়।


শানু হাওলাদারের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় গ্রহণ করা মামলার বিষয়ে কমিশনের চিঠিতে বলা হয়, ‘ঘটনার পরই বরগুনা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে নেওয়া ব্যবস্থা ও অনলাইনে মামলা রুজু করার প্রশংসনীয় নজিরকে কমিশন সাধুবাদ জানায়। অপরাধী যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা প্রতিপালনে বাংলাদেশ পুলিশ পেশাদারিত্বের পরিচয় দেবে বলে কমিশন প্রত্যাশা করে।’


এছাড়াও চিঠিতে পুলিশ সুপার মারুফ হোসেনের কাছে মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানতে চেয়েছে মানবাধিকার কমিশন। আগামী ৬ মে এর মধ্যে তদন্তের অগ্রগতি জানাতে বলা হয়েছে। 


এর আগে গত ৩০ মার্চ রাতে সন্দেহভাজন আসামি শানু হাওলাদারের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় প্রত্যাহার হওয়া ওসি মো. আবুল বাশারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বরগুনার এসপি মারুফ হোসেনকে ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগটি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান।

পরে গত ২ এপ্রিল এসপি মারুফের নির্দেশে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশারসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযোগটি এজাহারভুক্ত করা হয়।
এ নিয়ে এজাহারকারী ইশরাত হাসান জানান, শানুর মৃত্যুর ঘটনায় নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু(নিবারণ) আইন-২০১৩ এর  ১৫ ধারা মোতাবেক বরগুনার পুলিশ সুপারের কাছে একটি অভিযোগ ইমেইল করি। পরে গত ১ এপ্রিল রাতে বরগুনার পুলিশ সুপারের নির্দেশে আমতলী থানার প্রত্যাহার হওয়া সাবেক ওসির বিরুদ্ধে মামলা এজাহারভুক্ত হয়। এজাহারভুক্তের বিষয়টি বরগুনার পুলিশ সুপার তার সরকারি ইমেইলের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন। এর ফলে দেশে অনলাইনের মামলা হওয়ার ক্ষেত্রে এটাই প্রথম নজির হয়ে রইলো।



প্রসঙ্গত, গত ২৬ মার্চ বরগুনার আমতলী থানা হেফাজতে হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি শানু হাওলাদারের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। থানা থেকে শানু হাওলাদারের (৫৫) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ তিন লাখ টাকা দাবি করেছিল। সেই টাকা না পেয়ে শানুকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে।

তবে পুলিশের দাবি, শানু হাওলাদার আত্মহত্যা করেছেন।

বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন এ ঘটনা তদন্ত করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) তোফায়েল আহম্মেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন।

ময়নাতদন্ত শেষে ২৬ মার্চ রাত ১১টার দিকে শানু হাওলাদারের মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

পরে এ ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল বাশারকে প্রত্যাহার করা হয়। একইসঙ্গে থানার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ও সহকারী উপপরিদর্শক আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেন জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন।