করোনা প্রতিরোধে বিসিজি টিকা প্রসঙ্গে যা বললেন বিশেষজ্ঞরা

করোনা ভাইরাস (ছবি: ইন্টারনেট)

বাংলাদেশের মতো যেসব দেশ বাধ্যতামূলকভাবে বিসিজি টিকা প্রয়োগ করেছে, সেসব দেশে করোনার প্রকোপ কম বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এনওয়াইআইটি)-এর গবেষকরা। তবে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিসিজি টিকায় যে করোনা প্রতিরোধ হয় তা বলার সময় এখনও আসেনি, এর জন্য আরও সময় দরকার।

প্রসঙ্গত, যক্ষ্মা নিরাময়ের জন্য শিশুদের জন্মের পরপরই দেওয়া হয় বাসিলাস ক্যালমেট গুয়েরিন (বিসিজি) টিকা। করোনাভাইরাস ও বিসিজি টিকার সম্পর্কসূত্র খুঁজতে গিয়ে গবেষকরা দেখেছেন, বাংলাদেশের মতো যেসব দেশ সার্বজনীন নীতিমালার মধ্য দিয়ে বিসিজি টিকা প্রয়োগ করেছে; সেসব দেশে করোনার প্রকোপ কম। ভারতীয় গবেষকদের আশা, করোনার প্রতিরোধক তৈরিতেও এই টিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

গবেষকদের মতে, বিসিজি টিকাকে শ্বাসতন্ত্রজনিত বিভিন্ন সংক্রমণের প্রতিরোধক হিসেবেও গণ্য করা হয়। এ ধরনের সংক্রমণগুলো কোভিড-১৯ এর উপসর্গ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

এনওয়াইআইটি’র গবেষকরা বলছেন, বিসিজি টিকা নিয়ে কোনও দেশের জাতীয় নীতিমালা কেমন তার ভিত্তিতে করোনাভাইরাসের প্রকোপের মাত্রা নির্ধারণ করতে পেরেছেন তারা। তাদের দাবি, যেসব দেশ বিসিজি টিকাকে যত আগে বাধ্যতামূলক করেছে, সেসব দেশে করোনায় মৃতের হার ততো কম। উদাহরণ দিয়ে তারা বলছেন, ইরান ১৯৮৪ সাল থেকে বিসিজি টিকাকে সার্বজনীন নীতিমালায় পরিণত করেছে। সেখানে করোনায় মৃত্যুহার প্রতি ১০ লাখে ১৯.৭ জন। অন্যদিকে জাপান এই টিকা সার্বজনীন করেছে ১৯৪৭ সালে। ইরানের তুলনায় সেদেশে করোনাজনিত মৃত্যুহার অনেক কম। প্রতি ১০ লাখে ০.২৮ জন। ব্রাজিল সেদিক থেকে বিসিজি টিকা সার্বজনীন করেছে আরও আগে, ১৯২০ সালে। সেদেশে করোনাজনিত মৃত্যুহার ১০ লাখে ০.০৫৭৩।

ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সে দেশের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিসিজি টিকার কার্যকারিতা নিয়ে যে সম্ভাব্যতার কথা বলা হয়েছে তা নিয়ে তারা আশাবাদী। তবে এ ব্যাপারে মন্তব্য করার সময় এখনও আসেনি। একই কথা বলছেন বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরাও।

‘ইটস টু আর্লি টু সে অ্যানিথিং’ মন্তব্য করে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'ওই গবেষণাতে কেবল কিছু ধারণা দেওয়া হয়েছে, হয়তো কেউ সেটা নিয়ে রিসার্চ করবে। কিন্তু এনিয়ে এখনই বলার কিছু নেই, তবে যদি তেমন কিছু হয় তাহলে নিশ্চয়ই ভালো হবে।'

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, 'এটা প্রমাণিত কিছু নয়, গুরুত্বপূর্ণও না। বিসিজি টিকার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই, দুই-একটা স্টাডি হয়েছে, কিন্তু সেগুলো দিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে আসা যাবে না।'

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক প্রধান ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রিদওয়ানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'বিসিজি ভ্যাকসিন যক্ষ্মার জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে, অন্যান্য কারণেও ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য অনেক রোগের ভ্যাকসিন বানাতে বিসিজি ব্যবহারের দৃষ্টান্তও রয়েছে। এগুলো সবই হাইপোথিসিস, প্রুভেন না।'

তিনি আরও বলেন, 'মনে করা হচ্ছে শিশুদের কোভিড-১৯ না হওয়ার কারণ হচ্ছে এই ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিনটা দিলে কেবল ওই রোগটা না, তা পুরো ইমিউন সিস্টেমকে স্টিমুলেট করে, যাতে অন্য রোগের বিরুদ্ধেও কাভারেজ দেয়। এই সম্ভাবনা থেকেই অনেকে বলেছেন- বিসিজি মে বি ইউজড। কিন্তু এটা ব্যবহার করার জন্য যে প্রমাণ দরকার, তা নেই।'

তিনি বলেন, 'করোনাভাইরাস শুরু হয়েছে তিন মাস, বৈজ্ঞানিক তথ্য পেতে কমপক্ষে একবছর সময় লাগবে। এই ভ্যাকসিন কাজ করবেই—এটা বলার সময় এখনও আসেনি।'

এদিকে, চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানী আতিক আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে বিসিজি কাজ করবে, এটা ভ্যালিড কিছু বলে আমার মনে হয়নি।'