কাজে আসেনি ডিএনসিসির সেই হাত ধোয়ার বেসিন!




করোনা পরিস্থিতিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বিভিন্ন স্পটে বেসিন স্থাপন করেছিলকরোনা পরিস্থিতিতে ২৮টি স্থানে হাত ধোয়ার বেসিন স্থাপন করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। দায়িত্ব নেওয়ার আগেই সংস্থার বর্তমান মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বেসিনগুলোর উদ্বোধন করেন। কিন্তু চালু হওয়ার কয়েকদিন যেতে না যেতেই ভেস্তে যায় সেই কর্মসূচি। অনেক জায়গায় বেসিনের অস্তিত্ব মিললেও সেখানে হাত ধোয়ার পানি থাকলেও নেই সাবান, আবার সাবান দেখা গেলেও কোনও কোনও স্পটে নেই পানির ব্যবস্থা। আবার কোথাও কোথাও সেই বেসিনই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় ডিএনসিসি বলছে, তারা ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাধ্যমে নতুন করে ডিজাইন করে সংস্থার মার্কেটগুলোর সামনে ফের হাত ধোয়ার বেসিন স্থাপন করবে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে গত ১৭ মার্চ সকালে গুলশান–২ এর ডিএনসিসি মার্কেটের সামনে বেসিন স্থাপন ও হাত ধোয়া কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম। কথা ছিল পার্য়ক্রমে ডিএনসিসির গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানে এসব বেসিন সম্প্রসারণ করা হবে। এসব স্থানে নিয়মিত সাবান ও পানি রাখা থাকবে। থাকবে জীবনাণুনাশকও। যেখানে গাড়ির চালক ও যাত্রীরা হাত ধুয়ে নিতে পারবেন। কিন্তু উদ্বোধনের কয়েকদিন পরেই এসব স্থানে হযবরল চিত্র দেখা যায়।

ডিএনসিসির হাত ধোয়ার জন্য নির্ধারিত স্থানগুলো- উত্তরার রবীন্দ্র সরণির বঙ্গবন্ধু মুক্ত মঞ্চে, রাজলক্ষী, মাসকট প্লাজা, খিলক্ষেত বাসস্ট্যান্ড, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ফটক, মিরপুরে সনি সিনেমা হল, গ্রামীণ ব্যাংকের বিপরীত পাশ, আঞ্চলিক কার্যালয়–২, মিরপুর–১০ নম্বরে ফায়ার সার্ভিসের সামনে, মিরপুর ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড, মিরপুর–১৪ নম্বর মার্ক মেডিক্যালের সামনে, মিরপুর শাহ আলী মার্কেটের কোনায়, মিরপুর শপিং মলের নিচে (মিরপুর সরকারি কলেজের বিপরীতে), মিরপুর-১ নম্বর কো-অপারেটিভ মার্কেটের সামনে, গাবতলী পশু হাট, শ্যাওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড, ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে, মোহাম্মদপুর টাউন হলের সামনে, মোহাম্মদপুর বসিলা রোডের নতুন রাস্তার কালভার্টের ওপর, কারওয়ান বাজার (কিচেন মার্কেটের সামনে), আগারগাঁও পঙ্গু হাসপাতালের সামনে, গুলশান-২ ডিএনসিসি মার্কেটের সামনে, গুলশানে পুলিশ প্লাজার সামনে, কাকলী বাস স্ট্যান্ড, মহাখালী ডিএনসিসি আঞ্চলিক অফিসের সামনে এবং রামপুরা বাজারে বেসিন স্থাপন এবং হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

তবে সরেজমিনে অধিকাংশ স্থানেই হাত ধোয়ার এসব বেসিন দেখা যায়নি। কোথাও কোথাও থাকলেও তাতে পানি ও সাবান রাখা হয়নি। সাবান বিহীন স্পটগুলো ব্যবহার করলে তা থেকে করোনাভাইরাস আরও বেশি ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় কর্মসূচির সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তারা বলছেন, সঠিকভাবে যদি সার্ভিসটি সম্পন্ন করা না যায় তাহলে তা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। তা না হলে এসব হাত ধোয়ার বেসিনের মাধ্যমে করোনাভাইরাস আরও বহুগুণ ছড়িয়ে যেতে পারে।

মোহাম্মদপুর টাউন হলের ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন বলেন, প্রথম এক-দুই দিন বেসিনগুলো ভালো করে তদারকি করা হয়েছে। এর পর আর কেউ খোঁজ রাখেনি। কখনও একটু পানি দিয়ে যাওয়া আবার কখনো সারাদিনই ড্রামে পানি থাকতো না। পানি থাকলেও সাবান থাকতো না।

রামপুরা বাজারে গিয়েও ডিএনসিসির হাত ধোয়ার বেসিন খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেখানকার কয়েকজন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী জানান, শুরুর দিকে বাজারের এক পাশে একটি বেসিন ছিল। তবে এটি এখন নেই। কে বা কারা উঠিয়ে নিয়ে গেছে।

কারওয়ান বাজারেরও একই চিত্র। ডিএনসিসির মালিকানাধীন সবচেয়ে বড় এই বাজারটিতেও এখন হাত ধোয়ার কোনও বেসিন নেই। ব্যবসায়ীরা জানান, প্রথম কয়েকদিন তারা বেসিন দেখেছেন। তবে এখন আর বেসিনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যেভাবে হাত ধোয়ার স্পটগুলো স্থাপন করা হয়েছে সেভাবে হবে না। কারণ প্রতিদিন এসব বেসিনে পানি দেওয়া সম্ভব নয়। সাবান দিলেও মানুষ নিয়ে চলে যায়। আমরা চাচ্ছি এগুলোকে স্থায়ী একটা কাঠামোতে রূপান্তর করা। এজন্য আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে ডিজাইন করে ডিএনসিসির প্রতিটি কাঁচাবাজারে বেসিন স্থাপনের ব্যবস্থা করবো। এসব বেসিনে সরাসরি পানির সংযোগ এবং সাবানের ব্যবস্থা থাকবে বলেও আশ্বাস দেন মেয়র।