আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে সশস্ত্র বাহিনী




ঘূর্ণিঝড় আম্পান পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ শুরু করেছে সশস্ত্রবাহিনী। জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে তারা। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, ঘূর্ণিঝড় আম্পান পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সার্বিক ত্রাণ, উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

আমি২সেনাবাহিনী
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের নির্দেশনায় সেনা সদস্যরা আগে থেকেই ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম, ত্রাণ তৎপরতা ও চিকিৎসা সেবা প্রদানে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। বর্তমানে তারা ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত এলাকাসমূহে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর ১৪৬টি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দল স্বল্প সময়ে মোতায়েনের জন্যও প্রস্তুত রয়েছে। দুর্যোগ উপদ্রুত এলাকাগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা দিতে সেনাবাহিনীর ৭৬টি মেডিক্যাল টিমও প্রস্তুত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কবলিত স্থানসমূহে খাদ্য সহায়তা হিসেবে সেনাবাহিনীর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ১২ হাজার ৫০০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ১৬টি ওয়াটার পিউরিফিকেশন প্ল্যান্ট ও ১৪টি ওয়াটার বাউজার প্রস্তুত রয়েছে।

একইসঙ্গে করোনা মোকাবিলায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীর এক হাজার ২৭টি যানবাহনের সমন্বয়ে ৫৩১টি টহল ৬২টি জেলায় বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় পাঠানো হয়েছে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এ সব টহল দল এবং ইউনিটসমূহ প্রয়োজনে সহায়তা প্রদানের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

নৌবাহিনী
উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ভোলা ও হাতিয়ায় দুর্গম এলাকায় ত্রাণ সহায়তায় নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ চট্টগ্রাম নৌ জেটি ত্যাগ করেছে। অন্যদিকে সাতক্ষীরার গাবুরা ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে ২২ সদস্যের একটি নৌবাহিনী কন্টিনজেন্ট এবং উদ্ধার অভিযান পরিচালনায় সাত সদস্যের একটি ডাইভিং টিম কাজ করবে।

নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ ৬০০ প্যাকেট নিয়ে ভোলা এবং ৬০০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী নিয়ে হাতিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি বিবেচনায় চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের অন্যান্য জাহাজগুলো দুর্গত এলাকায় জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের জন্য যাত্রা করবে। খুলনা নৌ অঞ্চল হতে বানৌজা কপোতাক্ষ ২০০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী নিয়ে পটুয়াখালী এবং বানৌজা পদ্মা ৩৫০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে।

আর্মি৪
বিমানবাহিনী

বিমানবাহিনীর একটি সি-১৩০ পরিবহন বিমান, একটি এমআই-১৭এসএইচ হেলিকপ্টার, একটি অগাস্টা-১১৯ হেলিকপ্টার এবং একটি বেল-২১২ হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, নোয়াখালী, ঝালকাঠি, কুয়াকাটা ও সুন্দরবন এলাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের উদ্দেশ্যে দ্রুততার সঙ্গে পরিদর্শন করে। পরিদর্শন শেষে ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত এলাকার ক্ষয়ক্ষতির বাস্তব চিত্র যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করা হয়। এছাড়াও ১১৯ জন বিমানবাহিনীর সদস্যের (চার জন কর্মকর্তা, ৮১ জন বিমানসেনা ও ৩৪ জন বেসামরিক সদস্য) একটি টিম আম্পান পরবর্তী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে বিমানবাহিনীর নিজস্ব পরিবহনে সাতক্ষীরায় গিয়েছে।

উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় আম্পান পরবর্তী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিমানবাহিনীর ছয়টি পরিবহন বিমান এবং ২৯টি হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা রয়েছে। এছাড়া, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশার এ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সেল গঠনসহ বিমানবাহিনীর সব ঘাঁটিতে ২৪ ঘণ্টা প্রয়োজনীয় সহায়তার প্রদানের জন্য অপস্ রুম খোলা আছে।