কর্মচঞ্চল সচিবালয়ে ছিল না কোলাকুলি-হ্যান্ডশেক

1বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ। রবিবার (৩১ মে) যথারীতি সকাল সোয়া নয়টায় নিজ দফতরে এসেছেন। সাধারণ ছুটি থাকায় দীর্ঘ ৬৬ দিন পর অফিসে এলেন তিনি। অন্য সহকর্মীরাও এসেছেন। মুখে মুখে শুভেচ্ছা বিনিময় হলেও তাদের মধ্যে হয়নি ঈদের কোলাকুলি বা সাধারণ হ্যান্ডশেক। এক ধরনের অজানা ভয় কাজ করছে সবার মধ্যে। শুধু সুলতান আহমেদ নয়, পুরো সচিবালয় জুড়েই ছিল সেই ভয় আর আতঙ্ক। সচিবালয় ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
গত ২৬ মার্চ থেকে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস কার্যক্রম বন্ধ করে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। শুরুতে কয়েকদিনের জন্য হলেও পরবর্তীতে কয়েক দফায় সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে তা সর্বশেষ ৩০ মে পর্যন্ত গড়ায় ।রবিবার (৩১ মে) থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলার অনুমতি দেয় সরকার। মাঝখান দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে ৬৬ দিন। এই ৬৬ দিনের মধ্যে গেছে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস, বাঙালীর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ, পবিত্র শবে বরাত, শবে কদর ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। দুই মাস ৬ দিন সাধারণ ছুটি কাটানোর পর কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ সচিবালয়।

3

স্বাস্থ্যবিধি মেনে রবিবার (৩১ মে) সকাল ৯টা থেকে অফিস শুরু করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে এক সময়ের প্রাণচঞ্চল সচিবালয়কে মনে হয়েছে প্রাণহীন। দীর্ঘদিন পর  সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা হলেও তাতে কোনও উদ্দীপনা ছিল না। সবার চোখেমুখেই ছিল এক ধরনের চাপা আতঙ্ক, অজানা ভয়। কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার মুখেই ছিল মাস্ক। বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে ছিল হ্যান্ড গ্লাভস। অন্য বছরগুলোয় ঈদের ছুটির পর প্রথম অফিস খোলার দিন কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে কোলাকুলি, হ্যান্ডশেক হলেও এবছর তা হয়নি। এবার একে অপরের কাছাকাছি নয়, বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীকেই দেখা গেছে একে অপরের কাছ থেকে কিছুটা দূরে থেকে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে। সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি ভুলে গিয়ে যারা শুভেচ্ছা বিনিময় করতে কেউ কেউ এগিয়ে গেছেন সহকর্মী বা কর্মকর্তাদের দিকে। পরক্ষণেই ভুল বুঝতে পেরে বিব্রত হতেও দেখা গেছে তাদের।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ জানিয়েছেন, এতদিন পর কর্মস্থলে এসে সহকর্মীরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করতে পারবো না—এমন দিন আমরা চাইনি। চিরদিনের কুশল বিনিময়ের প্রথা হ্যান্ডশেক করতে পারবো না! এবছর তাই করতে হলো।

4

একইভাবে অর্থমন্ত্রীর দফতরের কর্মচারী কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, ঈদের পর প্রথমদিন অফিসে এসে আমরা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করিনি—এমন ঘটনা এবারই প্রথম। হ্যান্ডশেকও করিনি। কেমন যেন এক ধরনের অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস করার চেষ্টা করছেন বলেও জানান কামরুজ্জামান।  

সচিবালয়ে দায়িত্ব পালনরত ডিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার রাজিব দাস জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে সচিবালয়ে দর্শনার্থী পাস দেওয়া আপাতত বন্ধ।  পরবর্তী আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তই বহাল থাকবে।

সচিবালয়ের পরিচ্ছন্নতা কর্মী আরতি দাস জানিয়েছেন, অনেকদিন পর সবগুলো ভবনের মেঝেতে জীবাণুনাশক ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়েছে। প্রতিটি ফ্লোরের  বিভিন্ন স্থানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হয়েছে। বসানো হয়েছে জীবাণুনাশক টানেল। চার নম্বর ভবনের চতুর্থ তলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও জীবাণুনাশক টানেল বসানো হয়েছে।

2

 

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন