সাহেদের অপরাধের বিচার চান স্ত্রীও

রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে (ছবিটি রিজেন্ট গ্রুপের ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত)কোভিড ডেডিকেটেড রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ অপরাধ করলে বিচার হওয়া উচিত বলে মনে করেন তার স্ত্রী সাদিয়া আরবি রিম্মি। র‌্যাবের অভিযানের পর ৭ জুলাই দুপুরে সর্বশেষ মোবাইল ফোনে সাহেদের সঙ্গে কথা হয় তার। সাহেদ নিরাপদে আছে বলে তাকে জানিয়েছেন। এরপর থেকে সাহেদের মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাচ্ছেন স্ত্রী রিম্মি। তিনি জানান, তার ধারণা ছিল ২০০৮ সালে এমএলএম ব্যবসার ঘটনায় জেল খেটে সাহেদ শুধরে গেছেন।

বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) বিকালে সাহেদ ও তার ব্যবসা বাণিজ্যের বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেন তার স্ত্রী রিম্মি। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক সংবাদ পাঠক। ২০০৪ সালে ভালোবেসে সাহেদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রিম্মি। তবে মানুষটি যে এমন তা তিনি জানতেন না। সংসার টিকিয়ে রাখতে তিনি বারবার সাহেদকে সুযোগ দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর ওল্ড ডিওএইচএস ৪ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন সাহেদ। ৬ জুলাই বিকালে সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর তিনি আর বাসায় যাননি বলে জানিয়েছেন স্ত্রী রিম্মি। তবে দুই মেয়েকে নিয়ে বাড়িতেই রয়েছেন সাহেদের স্ত্রী।

রিম্মি বলেন, ‘এত কিছু আমি কখনোই টের পাইনি। কীভাবে ঘটলো এত সব! আমরা পুরো পরিবার শকড। সাহেদ কোনও অপরাধ করলে তার বিচার হওয়া উচিত। সবাই যেমন তার বিচার চাচ্ছে, আমিও তার বিচার চাই। এত স্পর্শকাতর একটা বিষয় নিয়ে তারা কীভাবে এটা করলো! এটা সত্যিই যদি ঘটে থাকে, তাহলে তার বিচার হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের আর কিছু বলার নেই।’

তিনি বলেন, ‘রিজেন্ট হাসপাতালে কোভিড-১৯ চিকিৎসা হচ্ছে এ নিয়ে আমরা আরও গর্ব করেছি। এত ভালো একটা উদ্যোগ। আমি নিজেও ফেসবুকে বারবার রিজেন্ট হাসপাতালের হটলাইন নম্বর প্রচার করেছি। যারা এখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন, তাদের ফেসবুক রিভিউ আমি শেয়ার করেছি। আমরা মনে করেছি সাহেদ শুধরে গেছে।’

২০০৮ সালে এমএলএম ব্যবসার ঘটনায় মামলা হয়েছিল উল্লেখ করে সাহেদের স্ত্রী বলেন, ‘ওই সময়টা আমাদের পরিবারের জন্য বাজে সময় ছিল। সেই সময়টা আমরা কাটিয়ে উঠছি। সেটা সবাই জানেন। এরপর নতুন করে সাহেদ ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করে। ২০১৬ সালে হাসপাতাল ব্যবসা শুরু করেন। আমরা সবাই ভাবছি সাহেদ শুধরে গেছে। কিন্তু এখন দেখলাম ভিন্ন। সে শুধরে নাই। তবে গণমাধ্যমে যা আসছে, তার সবকিছু সত্য কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। সবকিছু তদন্তের পর নিশ্চয় আদালতে প্রমাণ হবে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তদন্ত হোক।’

সাহেদের প্রতারণার বিষয়ে কখনও কিছু জানতেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে স্বামীর সঙ্গে তো কোনও স্ত্রী সারা দিন থাকেন না। আমার সঙ্গে এসব কথা কখনও সে শেয়ার করতো না। বলতো না। তার কর্মচারীরাও কখনও বলতো না। কারণ, তারা জানতো এসব আমি কখনোই প্রশ্রয় দেবো না। তাই হয়তো বলতো না।’

কোন পাওনাদার কখনও বাসায় গিয়ে অভিযোগ করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমএলএম ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কিছু লোক আসতো। তবে এই রিসেন্ট কয়েক বছর ধরে কেউ আসতো না। এত মানুষ তার কাছে টাকা পাবে, এগুলো কখনও কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি।’

জানা যায়, ৭ জুলাই বেলা ২টার দিকে সাহেদের সঙ্গে তার স্ত্রীর ফোনে কথা হয়। এ সময় সাহেদ তার স্ত্রীকে জানায়, যেখানেই আছে নিরাপদে আছেন তিনি। চিন্তা করতে নিষেধ করেছেন।

সাহেদ কেবল মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে এমন কিছু জানেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই কথা সত্য না। তিনি ভারতের পুনের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিল্ম স্টাডিজ বিষয়ে লেখাপড়া করেন। এরপর দেশে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন, তবে সেটা তিনি শেষ করতে পারেননি। বিয়ের আগে আসলে আমি সার্টিফিকেট দেখে তো আর বিয়ে করিনি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা শ্বশুর শাশুড়ির একমাত্র ছেলে সাহেদ। তার এক বোন রয়েছে, তবে সে ছোট। আমার শ্বশুর বর্তমানে আয়েশা মোমোরিয়াল হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে। আমাদের পরিবার সেখানে রয়েছে।’

অপরাধ যে করবে তিনি নিশ্চয় শাস্তি পাবেন উল্লেখ করে রিম্মি বলেন, ‘সাহেদ অপরাধ করলে নিশ্চয় শাস্তি পাবে। কোনও অন্যায়ের পক্ষে কথা বলা ঠিক না। আমরা পরিবারের সদস্যরা কখনও অন্যায়ের পক্ষে কথা বলবো না।’

ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার বাসায় যায়নি, কেউ ফোনও করেনি উল্লেখ করে বলেন, ‘ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এখানে আসেনি।’

মোহাম্মদ সাহেদ কোথাও সাহেদ করিম নামে পরিচিত। সাতক্ষীরা শহরের কামালনগরের বাসিন্দা। তার বাবা সিরাজুল করিমের একমাত্র ছেলে। তবে সাহেদের মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় সংসারে তার এক মেয়ে রয়েছে। ১৯৯৯ সালে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে থেকে এসএসসি পাস করেন সাহেদ। এরপর থেকে ঢাকায়। পরে সাতক্ষীরায় তেমন যাতায়াত ছিল না। মাঝে মাঝে এসে দু-একদিন থেকেই ফিরতেন। তার বাবা সিরাজুল করিম ও মা শাফিয়া করিম এলাকার সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। সাতক্ষীরাতেই কোটি টাকা সম্পদের মালিক ছিলেন তারা। করিম সুপার মার্কেট নামে তাদের একটা মার্কেট ছিল শহরেই। ২০০৮ সালের দিকে এই সুপার মার্কেট, বাড়িসহ সব সম্পদ বিক্রি করে স্থায়ীভাবে তারা ঢাকা শিফট হয়েছেন বলে জানান সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা।

গত ৬ জুলাই সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র‌্যাব। এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে নমুনা টেস্ট না করেই রোগীদের করোনার রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ পায় র‌্যাব। এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ, এমডি মাসুদ পারভেজসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ ঘটনায় ৯ জন গ্রেফতার হয়। তবে সাহেদ এখনও পলাতক। হাসপাতাল দুটি ও রিজেন্ট গ্রুপের অফিস সিলগালা করে দিয়েছে র‌্যাব।

এদিকে সাহেদের বিরুদ্ধে মানুষের সঙ্গে অসংখ্য প্রতারণার অভিযোগ পাচ্ছে র‌্যাব। র‌্যাবের গণমাধ্যম ও আইন শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, সাহেদকে গ্রেফতারের জন্য র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরও খবর:

রিজেন্টের চেয়ারম্যান সাহেদের ব্যাংক হিসাব জব্দ

রিজেন্ট হাসপাতাল ভবনই ছিল সাহেদের দখল করা 

যেভাবে উত্থান সাহেদের

 
 

রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান শাহেদসহ ১৭ জনের নামে মামলা