মানবতাবিরোধী অপরাধ: শতবর্ষী আসামির মৃত্যু

আব্দুল্লাহ হেল বাকী

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামিনে থাকা সাতক্ষীরার রাজাকার কমান্ডার আব্দুল্লাহ হেল বাকী (১১০) মারা গেছেন। প্রসিকিউশনের দাবি,  তিনিই ছিলেন বিশ্বে মানবতাবিরোধী অপরাধের  সবচেয়ে বয়োবৃদ্ধ আসামি।

সোমবার (১৩ জুলাই) রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর লালবাগে ভাড়া বাসায় আব্দুল্লাহ হেল বাকী  মৃত্যুবরণ করেন। পরে তার আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এই আইনজীবীর দাবি, মৃত্যুকালে আসামি আব্দুল্লাহ হেল বাকীর বয়স হয়েছিল ১১০ বছর।

এর আগে সাতক্ষীরার রাজাকার কমান্ডার আব্দুল্লাহ হেল বাকীসহ চার আসামির বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট থেকে তদন্ত শুরু হয়। মামলার অন্য তিন আসামি হলেন— সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেক মণ্ডল ওরফে জল্লাদ খালেক, খান রোকনুজ্জামান ও জহিরুল ইসলাম টেক্কা খান। এই চার আসামির মধ্যে আব্দুল্লাহ হেল বাকী শর্ত সাপেক্ষে জামিনে ছিলেন। আর  খালেক মণ্ডল গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। তবে অপর দুই  আসামি  খান রোকনুজ্জামান ও জহিরুল ইসলাম টেক্কা খান এখনও পলাতক।

আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ৫ মার্চ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ৬ জনকে হত্যা, ২ জনকে ধর্ষণ ও ১৪ জনকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে মামলাটি আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর্যায়ে রয়েছে।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর ছিলেন জেয়াদ আল মালুম ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামি খালেক মণ্ডলের পক্ষে মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন ও অপর আসামি সাতক্ষীরার রাজাকার কমান্ডার আব্দুল্লাহ হেল বাকীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। পলাতক দুই আসামির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী গাজী এমইএইচ তামিম।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১৬ জুন ভোরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খলিলনগর মহিলা মাদ্রাসায় নাশকতার উদ্দেশ্যে কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে গোপন বৈঠকের অভিযোগে আব্দুল খালেক মণ্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই বছরের ২৫ আগস্ট খালেক মণ্ডলের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলার মধ্যে শহীদ মোস্তফা গাজী হত্যা মামলায় ট্রাইব্যুনালের অধীনে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

পরে ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চার জনের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এরই ধারাবাহিকতায় অবশিষ্ট অন্য আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

এরপর ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলিপুর ইউনিয়নের বুলারাটী গ্রামের বাড়ি থেকে আব্দুল্লাহ হেল বাকীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে ট্রাইব্যনালে হাজির করা হয়। এদিকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের পর তার জামিন চেয়েও আবেদন জানানো হয়। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে ঢাকায় থাকা ও মামলার ধার্যকৃত দিনে হাজিরার শর্তে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম. আব্দুর রউফের হেফাজতে আসামি আব্দুল্লাহ হেল বাকীকে জামিন দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।