তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়া তিন সাক্ষীর মধ্যে একজন কমিউনিটি পুলিশের সদস্য। তিনি ঘটনার আগেই ফাঁড়ির ইনচার্জের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা হত্যার বিষয়ে আগে থেকেই জানতেন এবং হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এজন্য তাদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আনা হয়েছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’
র্যাব গত মঙ্গলবার মো. নুরুল আমিন, আয়াছ উদ্দিন ও নিজাম নামে তিন জনকে গ্রেফতার করে। যারা সিনহা রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী ছিল।
তবে সাক্ষী নুরুল আমিনের মা অভিযোগ করেছেন সোমবার বিকালে সাদা পোশাকে একদল লোক তার ছেলে এবং অপর দুই সাক্ষী আয়াছ ও নিজামের সঙ্গে কথা বলেছে। একপর্যায়ে তারা তিন জনকেই কালো গ্লাসের একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার নুরুল আমীনের মা খালেদা বেগম টেকনাফ থানায় একটি অপহরণ মামলা (নম্বর- ১৯) দায়ের করেন। এর একদিন পর র্যাবের পক্ষ থেকে এই তিন জনকে গ্রেফতারের কথা জানানো হয়। তিন সাক্ষীকেই আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
র্যাব কর্মকর্তা আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এই মামলাটি র্যাব তদন্ত করছে। তদন্ত কর্মকর্তা মনে করেছেন এই মামলার তিন সাক্ষী মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। আসামিদের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের গ্রেফতার করেছে।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর যাদের সাক্ষী করা হয়েছে, তারা আসলে কী দেখেছে এবং ঘটনার সময় তাদের কার অবস্থান কোথায় ছিল, এটি জানার জন্য র্যাব কর্মকর্তারা গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। একই সঙ্গে সাক্ষীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তাদের সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু সাক্ষীদের কথাবার্তার মধ্যে বিভ্রান্তি ও পৃথক পৃথক তথ্য পাওয়া যায়। এ কারণে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়।
র্যাব সূত্র আরও জানায়, এই ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী হলো সিফাত। এছাড়া নিহত সেনা কর্মকর্তার সঙ্গী হিসেবে রিসোর্টে অবস্থানকারী শিপ্রাসহ অন্যদের সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য রেকর্ড করা হবে। প্রাথমিকভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। সাক্ষীদের বয়ান আদালতেও রেকর্ড করা হবে। র্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, সাক্ষী ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক তদন্ত শেষে মামলার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যাতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আসামিরা কোনও তথ্য এড়িয়ে যেতে না পারে।
র্যাব জানায়, সিনহা হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ফোনালাপ ও ভিডিও ফুটেজ বের হয়েছে, এর সবকিছুই আমলে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনাটি তাৎক্ষণিক ঘটেছিল, নাকি পূর্বপরিকল্পিত ছিল, তা জানার চেষ্টা চলছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গুলির ঘটনাটি ঘটলে সেখানে আসলে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল এবং পূর্বপরিকল্পিত হলে এই ঘটনার সঙ্গে আর কারা জড়িত এবং কী উদ্দেশ্যে তাকে হত্যা করা হয়েছে এর সবকিছুই খুঁজে বের করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
র্যাবের ধরে আনা পুলিশের তিন সাক্ষীকে ‘অপহরণ’ দাবি করে মামলা
এবার মহেশখালীতে ওসি প্রদীপসহ ২৯ জনকে আসামি করে মামলা
আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা পাচারকারীদের কাছেও আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন ওসি প্রদীপ!
সিনহা হত্যা মামলা: ৪ পুলিশ সদস্য ও ৩ সাক্ষীর সাত দিনের রিমান্ড
এবার কক্সবাজার সদর থানার ওসিকে প্রত্যাহার
‘সেদিন দুপুর থেকেই ফোর্স নিয়ে মেরিন ড্রাইভে অবস্থান করছিলেন ইন্সপেক্টর লিয়াকত’
‘সিনহা হত্যাকাণ্ডে জড়িত নই, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’