‘বাক স্বাধীনতা খর্ব করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা অর্জিত হবে না’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি)

বাক স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা অর্জিত হবে— তা দুঃস্বপ্নেও ভাবা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

শুক্রবার (১৪ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা অর্জিত হবে— আমরা তা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারি না। বঙ্গবন্ধু তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে, তাঁর রাজনৈতিক জীবনে কখনও সেটি কল্পনাও করতে পারেননি। অতএব রাষ্ট্র ও সরকার যদি তরুণদের জন্য দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি কতে পারে— তাহলে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি যথার্থই সম্মান প্রদর্শন করতে পারবো।’

ভিডিওবার্তায় দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনের জন্য তরুণদের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে সরকার ও রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানান তিনি।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থান জানিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সোনার বাংলার স্বপ্নে যে বিষয়গুলো বিশেষভাবে লালন করেছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তার দৃঢ় অবস্থান। একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন। তার সোনার বাংলা আর দুর্নীতিমুক্ত বাংলা একসূত্রে গাঁথা। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, জালিয়াতি, কালেবাজারি, অর্থ পাচার— এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে জাতির পিতা সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তিনি সুযোগ পেলেই দেশবাসীকে এ বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বুদ্ধ করতেন।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘‘দুর্নীতিবাজদের উৎখাত করতে হবে। জোরালো ভাষায় এ ঘোষণা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণেও বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন, ‘একাত্তরে আহ্বান জানিয়েছিলাম, পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো, ১৯৭৫ সালে এসে আহ্বান জানাই— প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দূর্গ গড়ে তুলতে হবে।’ তিনি বলেছিলেন, আইন করবেন এবং দুর্নীতির অপরাধের জন্য কাউকে ছাড় দেবেন না।’’

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর সামাজিক আন্দোলনের আহ্বান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এও বলেছিলেন, তিনি একা পারবেন না, দেশের প্রতিটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে দুর্নীতিবাজদের উৎখাত করার জন্য। এগিয়ে আসতে হবে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনের জন্য। জাতির পিতা জোরালো ভাষায় পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন, সামাজিক আন্দোলন কে করবে বাংলাদেশে? করতে পারে বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমজীবীসহ দেশের প্রতিটি মানুষ। আর বিশেষভাবে উল্লেখ করেছিলেন দেশের তরুণসমাজ ও  ছাত্রসমাজের কথা। তরুণসমাজ, ছাত্রসমাজের প্রতি আস্থায় বলীয়ান এই নেতা আহ্বান জানিয়েছিলেন, দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে তরুণসমাজকে নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য। আজকে মুজিববর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে যদি সত্যিকার অর্থেই জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চাই, তাহলে এদেশের প্রতিটি মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘তরুণসমাজকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব সরকার ও  রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রকাঠামোতে, সরকার কাঠামোতে, প্রশাসনে, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থায়, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে, বিচার ব্যবস্থায় প্রতিটি পর্যায়ে দুর্নীতিবিরোধী চেতনা মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তার সহায়ক হিসেবেই দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবে তরুণসমাজ। এ জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে, মত প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা-হামলা করা যাবে না। কাউকে শত্রু ভাবা যাবে না। যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, তারা প্রকৃতপক্ষে সরকারের সহায়ক শক্তি।’