মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ ১৯৬ আসার অপেক্ষায় শুক্রবার গভীর রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন রায়হানের বাবা শাহ আলম। মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় রাত ১১টায় ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। ঢাকায় যখন ফ্লাইটটি নামে রাত প্রায় ১টা। বিমানবন্দরের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে যখন বেরিয়ে আসেন রায়হান তাকে বুকে জড়িয়ে নেন তার বাবা।
রায়হানের ফেরার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, রায়হান যখন কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে পৌঁছান, তখন তিনি মাস্ক পরে প্রবেশ করেছিলেন। তার হাতে ছিল হাতকড়া। বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের পর বোর্ডিংয়ের আগে কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করায় তিনি মাস্ক খুলে ফেলেন। তখন সেখানে অবস্থানরত অন্যান্য বাংলাদেশি তাকে দেখে এগিয়ে আসেন। বোর্ডিংয়ের জন্য তাকে লাইনের সামনে জায়গা করে দেন প্রবাসীরা। কেউ কেউ সেখানে তাকে জড়িয়ে ধরেন। প্রবাসে নির্যাতনের কথা তুলে ধরার জন্য তাকে সেখানেই বাহবা জানান।
২৯ দিন এক পোশাকে থাকা ও খাবারের কষ্টের কথা চিন্তা করে তার মা এসব খাবার রান্না করে পাঠান বলে জানান রায়হানের বাবা শাহ আলম। তিনি বলেন, আমাদের এবার কোনও ঈদ ছিল না। রায়হান আমাদের মধ্যে ফিরে আসায় ঈদের মতো খুশি লাগছে।
শরিফুল হাসান বলেন, রাতের খাবার খেয়ে রায়হান নিজ বাড়ির উদ্দেশে নারায়ণগঞ্জ রওনা হন। রায়হানকে দেখার জন্য সেখানে মানুষের ভিড় ছিল। ছেলেকে কাছে পেয়ে বুকে জড়িয়ে নেন মা।
পরদিন রায়হানের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। রায়হান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পরিবারের কাছে ফিরে আমি খুব আনন্দিত। দেশের মানুষ আমাকে যেভাবে সাপোর্ট দিয়েছে আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
মালয়েশিয়া থেকে ফিরে এসে এখন কী করবেন, জানতে চাইলে রায়হান বলেন, আমি এখনও মানসিকভাবে প্রস্তুত না। তবে আমার ইচ্ছা আমি প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করবো। আমরা দেখেছি প্রবাসীদের নিয়ে কথা বলার মানুষ খুব কম। তাদের দুঃখ-কষ্টের জায়গাগুলো নিয়ে আমি কাজ করতে চাই। হতে পারে আমি প্রফেশনাল বা কূটনৈতিক কেউ নই। তবে আমার যে অভিজ্ঞতা, তা থেকে বলতে পারি, লক্ষ্য সৎ হলে একাই ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ হওয়া সম্ভব।
সব শেষে রায়হান জানান, আমি তাদের দেশে থেকে যা বলেছি, সত্য বলেছি। আমি কোনও ভুল করিনি।
রায়হানকে সমর্থন করে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, রায়হান যে কথাটি বারবার বলেছে, তার সঙ্গে আমি একমত। এই কথাটি গত ১২-১৪ বছর ধরে আমি বলেছি। কেন শুধু বাংলাদেশিদের হাতে পায়ে শেকল পরিয়ে রাখা হয়। এটা তো কোনও মানবিক কাজ না। এটা এক ধরনের বৈষম্য, কোনও আইনই এর অনুমতি দেয় না। সেই কষ্ট থেকে রায়হান কথাগুলো বলেছে। প্রবাসীরা যে নানাধরনের নিপীড়নের শিকার হয়, সেটা বন্ধ করার জন্য আমরা যেন একটু কথা বলি। অন্তত আমরা যেন আমাদের নাগরিকদের মর্যাদা দেই।
তিনি আরও বলেন, রায়হানের ঘটনায় এটি প্রমাণ হয়েছে যে–ন্যায়ের পথে থেকে সবাই মিলে যদি একসঙ্গে প্রবাসীদের অধিকারের কথা বলা যায়, তাহলে দিন শেষে জয়ী হওয়া যাবে। আমরা যেন এই ঘটনা থেকেই শিক্ষা নেই। কারণ প্রায় প্রতিটি দেশেই আমাদের প্রবাসীরা নানা ধরনের সংকটে আছে। যত দেশ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ব্যবহার করা হয় বাংলাদেশিদের সঙ্গে। অন্য দেশের নাগরিকের সঙ্গে তো এরকম ব্যবহার করা হয় না। রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের এই জায়গায় জোর দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
আরও পড়ুন:
মায়ের কাছে ফিরলেন রায়হান কবির