সেই লোকোমোটিভ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে মতামত দিচ্ছে না রেল!

লোকোমোটিভ ২৯৩৩ (ছবি সংগৃহীত)তিন কোটি টাকা ব্যয়ে মেরামত করা বাংলাদেশ রেলওয়ের ২৯৩৩ নম্বর লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) তিন মাস না যেতেই বিকল হয়ে পড়েছে। নিম্নমানের যন্ত্রাংশ দিয়ে মেরামত করায় এমন অবস্থা হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে মেরামতের পুরো টাকাই গচ্চা গেছে রেলওয়ের। দীর্ঘ আট মাসের প্রচেষ্টায় সারিয়ে তোলা ইঞ্জিনটির এমন পরিণতি নিয়ে গত ২৭ জুলাই ‘৩ কোটি টাকায় মেরামত হওয়া ইঞ্জিন ৩ মাসেই বিকল!’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে বাংলা ট্রিবিউন। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর হই চই শুরু হয় রেলওয়েতে। বিষয়টি তদন্তের উদ্যোগ নেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ জন্য প্রাথমিকভাবে প্রতিবেদনটির বিষয়ে রেলওয়ের মতামত জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি রেলওয়ে।

প্রথম দফায় গত ১০ আগস্ট রেলওয়ের মহাপরিচালককে পত্র দিয়ে প্রতিবেদনটির বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়। এরপর ১০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও বিষয়টি অনুসন্ধান করার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়কে পত্র দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পত্র পাওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় রেলওয়েকে তাগিদপত্র দেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ড. সৈয়দা নওশীন পর্ণিনী গত ৩০ সেপ্টেম্বর এ চিঠি দেন।

রেলওয়ের মহাপরিচালককে দেওয়া পত্রের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘৩ কোটি টাকায় মেরামত হওয়া ইঞ্জিন ৩ মাসেই বিকল’ শিরোনামে বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত সংবাদ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন), যন্ত্রাংশ, ক্যারেজ মেরামতে অনিয়ম সংক্রান্ত। চিটিতে বলা হয়, ‘গত ২৭ জুলাই বাংলা ট্রিবিউন পত্রিকার ফটোকপি পাঠিয়ে “৩ কোটি টাকায় মেরামত হওয়া ইঞ্জিন ৩ মাসেই বিকল” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে মতামত পাঠানোর জন্য গত ১০ আগস্ট অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত মতামত পাওয়া যায়নি। বর্ণিত বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে পুনরায় অনুরোধ করা হলো।’

রেলওয়েকে দেওয়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পত্ররেলপথ মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, বাংলা ট্রিবিউনে সংবাদটি প্রকাশের পর রেলভবনে তোড়জোড় শুরু হয়। এখানকার সৎ কর্মকর্তারা বিষয়টি তদন্তের জন্য কর্তৃপক্ষকে জানালেও কেউ কেউ তাতে নিরুৎসাহিত করতে থাকেন। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের পক্ষে অবস্থান নেন। পরে কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে প্রতিবেদনটির বিষয়ে রেলওয়ের মতামত জানতে চান। কিন্তু তারা মতামত দেয়নি। পরে ঘটনাটি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও জানতে চেয়েছে। এরপর রেলওয়েকে মন্ত্রণালয় থেকে দ্বিতীয় দফায় পত্র দেওয়া হয়।

বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য রেলওয়ের মহাপরিচালক শামসুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠালেও উত্তর দেননি।

জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ড. সৈয়দা নওশীন পর্ণিনী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে রেলওয়েকে পত্র দেওয়া হয়েছে। তবে তারা জবাব দিয়েছে কিনা তা নথি দেখে বলতে হবে।’

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর ঢাকা-সিলেট রেল রুটে পারাবত আন্তনগর ট্রেনটি হবিগঞ্জের মাধবপুর নোয়াপাড়া স্টেশনে লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনায় ইঞ্জিনের নিচের অংশের জ্বালানি ট্যাংকে আগুন লেগে সেটি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে পড়ে। পুড়ে যাওয়া ইঞ্জিনটি নেওয়া হয় চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ডিজেল শপে। ইঞ্জিনটি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা কোনোভাবেই মেরামত করা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে এর সচল হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। পরে ২০১৯ সালের ১৫ মে মেরামতের জন্য তা কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা কেলোকায় পাঠানো হয়।

এরপর চলতি বছরের মার্চে ট্রেন পরিচালনার জন্য লোকোমোটিভটিকে রেল বহরে সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু মেরামতের তিন মাস না যেতেই গত ২৮ জুন ইঞ্জিনটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। পুনরায় মেরামতের জন্য এটিকে কেলোকাতে পাঠানো হয়েছে। এ সময় ইঞ্জিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ ট্রাকশন মোটরে ত্রুটি ধরা পড়ে। ট্রাকশন মোটর মেরামত করে সারিয়ে তোলা হয়। এরপর গত ৭ জুলাই পুনরায় এটিকে ট্রেন চালনায় সংযুক্ত করা হয়। কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেন পরিচালনার কাজে এটি ব্যবহার হয়ে আসছিল। দ্বিতীয় মেরামতের ১১ দিন পর আবারও গত ১৮ জুলাই ইঞ্জিনটি পার্বতীপুর লোকোশেডে বিকল হয়ে পড়ে।