জীবিত নবজাতককে মৃত ঘোষণা

‘চিকিৎসকদের ব্যর্থতা আছে, তবে বেঁচে ফেরাটা অস্বাভাবিক’

৫৫

‘দাফনের সময় জীবিত উদ্ধার নবজাতককে মৃত ঘোষণার বিষয়ে চিকিৎসকদের ব্যর্থতা আছে। তারা আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারতেন। তবে এটাও সত্যি যে শিশুটির বেঁচে ফেরার ঘটনাটিও অস্বাভাবিক’—মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি শিশুটি অপরিণত ছিল। মাত্র ২৬ সপ্তাহে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। ওইদিন ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে থেকেই বাচ্চাটি তার মায়ের পেটের ভেতর নড়াচড়া করছিল না। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর এক ঘণ্টার মতো চিকিৎসক-নার্স মিলে বাচ্চাটিকে অবজারভেশনে রেখেছিল। শ্বাস-প্রশ্বাস, নড়াচড়া, কান্না, কোনও কিছুই লক্ষ করেননি চিকিৎসকরা। প্রাথমিক অবজারভেশন এবং কয়েকটি বেসিক পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেন যে বাচ্চাটি মৃত। মৃত ঘোষণার চার-পাঁচ ঘণ্টা পর বাচ্চাটি আবারও নড়েচড়ে ওঠে। বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বাভাবিকভাবে বেঁচে ফেরা। এটা একটা রেয়ার কেস।’

তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় আমাদের চার সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ করেছে। তদন্ত কমিটি চিকিৎসকদের ইচ্ছাকৃত কোনও ভুল খুঁজে পায়নি। এমন ঘটনার অনভিজ্ঞতা এবং শিশুটির অস্বাভাবিকভাবে বেঁচে ফেরার জন্য ঘটেছে এটা।’

ঢামেকের এই পরিচালক বলেন, ‘যেহেতু শিশুটি আবারও বেঁচে ফিরেছে। সেক্ষেত্রে সে জীবিত ছিল। আর এজন্য আমরা এ ঘটনায় ব্যর্থতার দায় নিচ্ছি। তদন্ত কমিটি আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতার বিষয়ে সুপারিশ করেছন। সেগুলো আমরা দ্রুত সমাধান করবো এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে সচেতন থাকবো। তবে এখনই আমরা কোনও চিকিৎসকের ব্যর্থতায় তার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও অভিযোগ আনছি না।  আরও কিছু তদন্ত বাকি রয়েছে। তারপরে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছাবো।’

শিশুটি এখন কেমন আছে জানতে চাইলে ঢামেকের নবজাতক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মনীষা ব্যানার্জি বলেন, ‘এখনও শিশুটি আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। শিশুটি যদি বেঁচে থাকে সেটাও আমাদের জন্য মিরাকল হবে। আমরা তাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। তার শরীরে স্যালাইন চলছে। অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। যদি এই অবস্থা আরও একদিন থাকে, তাহলে আমরা পয়েন্ট ৫ মিলি খাবার তার মুখে দেবো।’

এর আগে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চার দিন আগে স্ত্রী শাহিনুরকে ভর্তি করান স্বামী ইয়াসিন মোল্লা। ১১০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া শাহিনুর শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) ভোরের দিকে স্বাভাবিকভাবেই একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন। তবে জন্মের পরপরই ওই নবজাতককে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

মৃত্যুর সনদে চিকিৎসকরা জানান, নবজাতকটি মৃত অবস্থায়ই জন্ম নিয়েছে। পরে ওই নবজাতককে একটি প্যাকেটে ভরে তার বাবা ইয়াসিন দাফনের জন্য আজিমপুর কবরস্থানে নিয়ে যান। কবরস্থানের লোকজন দাফন-কাফন বাবদ এক হাজার ৪০০ টাকা দাবি করলে, টাকা না থাকায় নবজাতককে বসিলা কবরস্থানে নিয়ে যান তিনি। সেখানে যাওয়ার পর হঠাৎ নবজাতকটি নড়ে ওঠে। তখন শিশুটিকে ঢামেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন তিনি।

আরও পড়ুন:

ভাগ্যিস পকেটে চৌদ্দশ’ টাকা ছিল না!

ঢামেকে মৃতঘোষিত নবজাতক দাফন করতে গিয়ে জীবিত!