‘সাংবিধানিক অধিকার ব্যাহত করার অন্যতম আইন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’

২০০

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, আমাদের যেই আইনগুলো বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আলোচিত এবং আমাদের সাংবিধানিক অধিকারকে ব্যাহত করে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’। কিন্তু এর বাইরেও আরও আইন রয়েছে। বুধবার (২৮ অক্টোবর) রাতে পেন বাংলাদেশ আয়োজিত ‘চ্যালেঞ্জিং ল দ্যাট ভায়োলেট ফান্ডামেন্টাল ফ্রিডম’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এই মন্তব্য করেন।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে যে মামলাগুলো হয়েছে সাম্প্রতিককালে, সেটি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে। যে আইনগুলো আমাদের সাংবিধানিক অধিকারগুলোকে লঙ্ঘন করে, তার পেছনে তাকালে দেখা যাবে— মূল বোধ হচ্ছে রাজনীতির মধ্যে। কারণ, আমাদের সংবিধান আমরা রাজনীতির মাধ্যমে পেয়েছি, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে প্রাপ্ত একটি দেশ। এই একই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আইনগুলো হচ্ছে এমন ভাবে যে, সাংবিধানিক অধিকারগুলো খর্ব করা হচ্ছে। কেন সেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ‘ডেভিল’ এবং ‘অ্যাঞ্জেল’।’’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাইবো অ্যাঞ্জেল থাকুক, ডেভিল কেন থাকবে? কারণ, আমরা দেখি যে, রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের প্রবণতা রয়েছে— ভুবনটিকে একটি বিশেষ মহলের একচ্ছত্র ভুবন হিসেবে তৈরি করতে হবে। যেটা করতে গেলে বিপরীতে যা থাকে, সেগুলোকে দূর করতে গেলে, মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে যত বেশি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, ততবেশি একচ্ছত্র ভুবনে রূপান্তরিত করা সম্ভব হয়। আমরা বাস্তবে সেটাই করতে দেখি।’

আলোচনার শুরুতে পেন বাংলাদেশের সভাপতি কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সেই রাষ্ট্র— যেখানে স্বচ্ছতা আছে, জবাবদিহিতা আছে, যেখানে আইন প্রণেতারা মানুষের চিন্তাভাবনাকে সম্মান করেন, যারা চিন্তাশীল মানুষ আছেন তাদের সঙ্গে আলোচনাটি চলে। আমাদের দেশেও বঙ্গবন্ধু চিন্তাটি করেছিলেন অনেক আগে। তার লেখাতেও আমরা দেখেছি, তিনি সব সময় মানবাধিকারের পক্ষে, মুক্তচিন্তার পক্ষে, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কারাগারের রোজনামচায় তিনি সেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ আমরা সেই দেশে আছি, যে দেশের সৃষ্টি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। কাজেই এখানে সবসময় সুচিন্তা সবার প্রথমে থাকবে— সেটা আমরা আশা করি। এজন্য যেখানে এর ব্যত্যয় ঘটে আমরা প্রতিবাদ জানাই। আমি সবসময় চাই মুক্তচিন্তার জয় হোক।’

আলোচনায় আরও অংশ নেন— ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক আশিস সৈকত,সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। সভা সঞ্চালনা করেন সুপ্রিম  কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান ও  পেন বাংলাদেশের মহাসচিব মোহাম্মদ মহিউদ্দিন প্রমুখ।