ফুল হয়ে গেল পথের কাঁটা!

122840919_661631847872143_1081993023254467020_nকথা ছিল সড়কের সৌন্দর্য বাড়াবে ওরা। কিন্তু যত্নআত্তি জোটে না অনেক দিন। তাই অবহেলায় সড়কেই হেলে পড়ছে রুগ্ন খিটখিটে বাগানবিলাস। সৌন্দর্য তো গেলোই, সঙ্গে বেড়ে গেলো দুর্ঘটনার ঝুঁকি!

রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়মিত ছাঁটাই না করায় সড়কেই ছড়িয়ে পড়ছে বাগানবিলাসের ডালপালা। এতে যানবাহনসহ পথচারী চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল আরোহীদের জন্য বাড়তি ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে গাছগুলো।
২০১৬ সালের জুনে ডিএসসিসির সড়ক সবুজায়নের প্রকল্প হাতে নেন তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত প্রকল্পটির মাধ্যমে মন্ত্রিপাড়ার পুরাতন এলিফ্যান্ট রোডে ১৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের ‘সবজিবাগান’ নামের একটি বাগান, ৫ কিলোমিটার ফুটপাত ও ১১ কিলোমিটার সড়কদ্বীপের ‘সৌন্দর্য বর্ধন’ করা হয়।
ওই সময় প্রকল্পটির আওতায় ডিএসসিসিতে প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়ক বিভাজকে বাগানবিলাস ফুলগাছ লাগানো হয়। সড়কগুলোর মধ্যে রয়েছে গোলাপশাহ মাজার থেকে কাকরাইল নাইটিংগেল মোড়, বঙ্গবাজার থেকে শেরাটন হোটেল, মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ মোড়, রমনা থানার সামনে থেকে সবজিবাগান এলাকা, গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার থেকে ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড, বঙ্গবাজার থেমে মৎস্য ভবন এবং মতিঝিলের বলাকা চত্বর এলাকা। প্রকল্পের আওতায় সড়ক বিভাজকে ফুলগাছ লাগানোর পাশাপাশি সেগুলোর সুরক্ষায় লোহার গ্রিল দেওয়াসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হয়।
122850483_1718289674997465_7822428832841072447_nবাস্তবায়নের পর প্রথম তিন বছর এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লিও ইন্টারন্যাশনালের। তখন পরিচর্যা চলতো। ফুল ফোটায় প্রশংসাও কুড়িয়েছিল সিটি করপোরেশন। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের জুনে। দায়িত্ব চলে যায় ডিএসসিসির ঘাড়ে। কিন্তু গাছের নীরব ডাকে সাড়া দেয়নি সিটি করপোরেশন। কিছু কিছু ডাল বেড়েছে বেঢপ আকারে। বিভাজক ছেড়ে সড়কে উঁকি দিচ্ছে বেশিরভাগ বাগানবিলাস।
লিও ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী নুরুর রহমান ভূইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী আমরা তিন বছর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলাম। তখন বাগানে সুন্দর ফুল ফুটেছিল। এ কাজে গাছ বিশারদসহ দক্ষ মালিও ছিল। যারা গাছে পানি দেওয়া, শাখা ছাঁটাইসহ যাবতীয় তদারকি করতো। আমাদের দায়িত্ব শেষ হওয়ার পরেও সিটি করপোরেশনের অনুরোধে কয়েকবার ডালপালা ছেঁটেছি।’
প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, অনেক স্থানেই ডাল বড় হয়ে সড়কে হেলে পড়েছে। এতে যানবাহনের সঙ্গে গাছের ডালের প্রায়ই ঘষা লাগছে। গাড়ির চাকায় ডালের আগা বেঁধে উপড়ে যাচ্ছে আস্ত গাছও। ধুলা জমে বিবর্ণ হয়ে গেছে সব পাতা।

বঙ্গবাজার মোড় থেকে নগরভবনে যাওয়ার পথে বিভাজকের গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। সেখানে নতুন করে আবার বিভাজক তৈরি করা হচ্ছে। একই চিত্র দেখা গেছে গুলিস্তান মোড় থেকে টেলিকমিউনিকেশন কার্যালয় পর্যন্ত।

জানতে চাইলে পাঠাও চালক আকরামউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাগানবিলাস ফুল গাছের ডাল রাস্তায় হেলে পড়ছে। অনেক সময় শরীরে আঘাত লাগে। সিটি করপোরেশনের উচিত এগুলো প্রতিনিয়ত ছেঁটে রাখা।

123029964_267578014675036_8898470982092027039_nএ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর সার্কেল) মুন্সি মো. আবুল হাসেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও আমরা অনুরোধ করে ওদের দিয়ে ডালপালা ছাঁটাই করিয়েছি। এরপরও যেসব এলাকায় রয়ে গেছে সেগুলো পরিষ্কারের কাজ করছি। সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীদের নির্দেশ দিচ্ছি তারা গাছের ডাল কাটাসহ রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।