‘বিতর্কিত’ পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি নজর দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি চিকিৎসকদের আহ্বান

ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের গ্রেফতার ও হয়রানির প্রতিবাদে চিকিৎসকদের সংহতি অনুষ্ঠান‘বিতর্কিত’ পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি নজর দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে অযৌক্তিক ও অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর এজন্য যে পুলিশ কর্মকর্তা বিভ্রান্তিমূলক কথা বলছেন তাকে জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও তারা মন্তব্য করেছেন। ডা. মামুনকে নিঃশর্ত জামিন ও দ্রুত মুক্তি না দিলে চিকিৎসকরা কঠোর আন্দোলনে যাবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। সারা দেশে চিকিৎসকদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনকে ( বিএমএ) কঠোর কর্মবিরতি দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন সাধারণ চিকিৎসকরা।

আজ শনিবার ( ২১ নভেম্বর) জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের গ্রেফতার ও হয়রানির প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত সংহতি অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা এ ঘোষণা দেন।

সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনের মৃত্যুর সঙ্গে ডা. মামুনের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই জানিয়ে সংহতি অনুষ্ঠানে বলা হয় একজন বিসিএস কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করতে হলে যে আইন রয়েছে দেশে ডা. মামুনকে গ্রেফতারের সময়ে সেটা অনুসরন করা হয়নি। তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে। তাকে ফাঁসানো হয়েছে অন্যায়ভাবে। সরকারি চাকরিবিধি অমান্য করে ডা. মামুনকে গ্রেফতারের জন্য যেসব পুলিশ সদস্য জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টদের এই সংহতি অনুষ্ঠানে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সোসাইটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ডা. মামুনের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তার বিচার দাবি করে তারা বলেন, যার এর জন্য দায়ী তাদের চিহ্নিত করে তাদের সার্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করেন।

আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা বলেন, গত বছর ডেঙ্গু এবং করোনা মহামারিতে চিকিৎসকরা প্রাণ দিয়েছেন, সীমিত সম্পদ দিয়ে তারা জনগণের সেবা করে যাচ্ছেন। তাদের জন্য দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনও ভেঙে পড়েনি। কিন্ত হাতকড়া নিয়ে ডিউটি পালন হয় না। তারা বলেন, বাংলাদেশের চিকিৎসকরা মানবিক, তাদের রাজপথে নামাবেন না। আর সেটা করা হলে চিকিৎসকদের সেখান থেকে ওঠানো যাবে না।

চিকিৎসকরা বলেন, সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনের ভাই নিজে স্বীকার করেছেন তারা পরিবারের সিদ্ধান্তে এই হাসপাতাল থেকে বেসরকারি মাইন্ড এইড হাসপাতালে নিয়েছেন। তাহলে সেখানে কীভাবে হত্যার মামলার আসামি হন ডা. মামুন।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা ডা. মামুনের গ্রেফতার নিয়ে গণমাধ্যমে যেভাবে কথা বলছেন ও তাকে অভিযুক্ত করেছেন সেটা কোন আইনে করেছেন-সেই প্রশ্ন তুলে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. শাহাদাৎ হোসেন রিপন বলেন, ‘একটা মহল সরকারের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করছে, চিকিৎসকদের সরকারের মুখোমুখী দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জামান বলেন, ‘পুলিশ হেফাজতে অনেক মৃত্যু হয় যার বিচার হয় না। সেসবের সুষ্ঠু তদন্ত হয় না। ডা. মামুনকে গ্রেফতারের পর তথ্য বিভ্রান্ত করে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা এর জবাব দিতে পিছপা হবো না।’

বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. জাকির হোসেন সুমন বলেন, ‘প্রধামন্ত্রীর কাছে আবেদন, যে সব পুলিশ সদস্য ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) পোস্টিং নিয়ে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মেকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা চিকিৎসক সমাজ এবং বাংলাদেশের মানুষ জানে।’ 

চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটি (এফডিএসআর) এর উপদেষ্টা ডা. আব্দুন নূর তুষার বলেন, ‘আমাদের সিস্টেম, কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসকদের প্রতি সমআচরণ করছে না। পক্ষপাতমূলক পুলিশ কর্মকর্তার মনের খেয়ালে ডা. মামুনকে ধরে নেওয়া হয়েছে। ডা. মামুনকে যে আঘাত করা হয়েছে সেটা সবার ওপর আঘাত।‘ বিএমএ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদসহ বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডা. তুষার বলেন, ‘আমাদের দিক নির্দেশনা দিতে হবে, কী করতে হবে আমাদের বলবেন।’

‘কাল্পনিক’ মামলায় ‘অযৌক্তিক ও অন্যায়ভাবে’ ডা. মামুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযোগ করে বিএমএর দফতর সম্পাদক ডা. শেখ শহীদ উল্লাহ বলেন, ‘যে পুলিশ কর্মকর্তা বা যাদের অতি উৎসাহে অন্যায়ভাবে ডা. মামুনকে গ্রেফতার করেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাই।’

সংহতি অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান, মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানাসহ চিকিৎসকদের বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন- 

মানসিক হাসপাতালে মারধরে এএসপির মৃত্যুর অভিযোগ