‘সাইকো সোশ্যাল পলিসি করলে মানসিক রেমিডির জায়গা হবে’

child found1

আমরা কাউন্সিলিং সাপোর্ট দেওয়ার জন্য গত কয়েক বছরের অনেক চেষ্টা করেছিলাম, একটা ন্যাশনাল সাইকো সোশ্যাল পলিসি করা যায় কিনা, পলিসি করলে ফায়দা হচ্ছে আমরা যেই পেশায় থাকি না কেন, আমার মানসিক রেমিডির জন্য যদি সুযোগ থাকে, তাহলে মনের ব্যথা কিছুটা লাঘব হতে পারে। বুধবার (২৬ নভেম্বর ) রাতে চাইল্ড ফাউন্ডেশন আয়োজিত নারীদের মানসিক নির্যাতন বিষয়ক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল হোসেন। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন চাইল্ড ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান আনোয়ারা আনাম খান। ওয়েবিনারের মিডিয়া পার্টনার ছিল বাংলা ট্রিবিউন।

ড. আবুল হোসেন বলেন, 'শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য আমরা যে পরিমাণ বরাদ্দ করি, সাপোর্ট দেই, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সরকারিভাবে কিন্তু সেটি নেই। এমনকি জেলাতেও নেই। এই জায়গায় কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। আমাদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক যে অবস্থা, সেখানে মানসিক স্ট্রেসও থাকে। আমরা এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেই না। একজনকে আমি যতই বুঝাই না কেন, তার যে মনের অবস্থা, মানসিক অবস্থা সেটা কিন্তু অপূরণীয়। কারণ মনের ক্ষত সারানোর পথ আছে কিনা জানা নেই।'

মনোবিদ মকসুদ মালেক বলেন, 'নির্যাতনের যে বিভিন্ন ধরণ রয়েছে, সেটা আমাদের খুব কষ্ট দেয়। নির্যাতনের শিকার মানুষটি এক সময় কোনও না কোনওভাবে সেটা থেকে উত্তরণ করে কিন্তু মনের যে বিষয় আছে তার জন্য কিন্তু অনেকেই কাউন্সেলিং করতে আসেন। বিভিন্ন ধরনের যে নির্যাতনের শিকার যা মানসিক কাউন্সেলিংয়ের সাপোর্টটি যারা পেয়েছেন, যারা সেখানে যেতে পারছেন, তাদেরই শুধু আমরা দেখছি। যে পরিস্থিতি হয়েছে একজন আইনজীবীর পক্ষে সেটা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যেতো। কারণ আমরা যে ভাবনা থেকে কাজটি করি, যে জনবল কাজে লাগাই, এই কাজে সেটা দেওয়ার পরও দেখা যায়- সামাল দেওয়া যায় না, ওভারলোড হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, মানসিক স্বাস্থ্যকে অবশ্যই দেখা দরকার। কারণ আইনি প্রেক্ষাপটের বিষয়গুলো একসময় মীমাংসিত হয়, কিন্তু মানসিক সুস্থতা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ জায়গাটির উন্নয়ন যদি না ঘটে, তাহলে একসময় ভালো একটা অবস্থার মধ্যে যেতে পারে না।'

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আয়েশা আক্তার বলেন, 'করোনার আগে নারীদের প্রতি যে সহিংসতা ছিল, সেই ধরনের কেস আমরা অনেক বেশি পেয়েছি। জামিন ইস্যুতে অনেকগুলো মামলা আমাদের এখানে। দেখা যায় নিম্ন আদালতে জামিন হচ্ছে না, আমাদের এখানে এসেছে। আমি যখন কেসগুলো পর্যালোচনা করি, তখন কিছু দুঃখজনক ঘটনা দেখা যায়। যেমন- আসামি হচ্ছেন একজন নারী, তিনি হয়তো হত্যা মামলার আসামি, তার স্বামীকে খুন করেছেন। আমরা যখন পর্যালোচনা করি, তখন দেখি যে কী কারণে তিনি এই হত্যা করলেন। তখন দেখা যায়, তার স্বামীর কোন পরকীয়া ছিল বা যৌতুকের জন্য নির্যাতন করছিল। শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি যখন মানসিক নির্যাতনগুলো হচ্ছে, তখন এই ধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে। করোনার কারণে আমাদের সবকিছুই যখন লকডাউন ছিল, তখন আমরা ফোনে ফোনে কাজ করতাম । তখন শুনতাম, যারা অফিসে যেত আগে তারা ঘরে থেকেও কাজ করতে হচ্ছে। কর্মজীবী নারীর ক্ষেত্রে তাকে তো অফিস টাইম বাসা থেকে দিতে হচ্ছেই, স্বামীর যত্ন করতে হচ্ছে, সন্তানদের দিকেও খেয়াল রাখতে হচ্ছে, ঘরের মুরুব্বিদেরও খেয়াল রাখতে হচ্ছে। সবাই একজন নারীর কাছে আশা করে যে কাজগুলো সে পারফেক্টলি করবে। তখন দেখা যাছে যে, ছোট্ট একটু ভুলের জন্যও কিন্তু সহিংসতা হচ্ছে। যখন পুরো পরিবার বিরুদ্ধে চলে যায়, তখন কিন্তু এই লকডাউনের মধ্যে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হয়, কারণ কোথাও যাওয়ার উপায় নেই তার।'

তিনি আরও বলেন, 'শারীরিক নির্যাতনের চিহ্ন আমরা সহজেই দেখাতে পারি কিন্তু মানসিক অবস্থার কথা কেউ সহজে বলতে না পারলেও আমরা আইনজীবী হিসেবে বুঝতে পারি। কারণ একজন স্বামী যত অপরাধী হোক না কেন আমাদের দেশে এমন কোনও আইন নেই যে , আমি সেই লোকটিকে জোর করবো যে সংসারটি ভাঙবেন না।'