তর্কযুদ্ধে শেষ হল ভোটযুদ্ধ

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দিনভর তর্কযুদ্ধের মধ্য দিয়ে শেষ হল পৌর নির্বাচনের ভোট। কেন্দ্র তর্কযুদ্ধে সরগরম থাকলেও মাঠে দুই দলের নেতাকর্মীরা ভোটযুদ্ধেই ছিলেন শেষ পর্যন্ত।

২৩৪টি পৌরসভায় নির্বাচন শেষ হয়েছে বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টায়। বাংলাদেশে এই প্রথম পৌর নির্বাচন দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয়। আশঙ্কার তুলনায় সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ছিল কম। তবে ব্যালট পেপার ছিনতাই, কেন্দ্র দখল, মারামারি ও ককটেলবাজির বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা অব্যাহত ছিল দিনব্যাপী। ভোটকেন্দ্র বাতিল হয়েছে বেশ কিছু পৌর এলাকায়।

কিছু অভিযোগ বাদ দিলে আওয়ামী লীগের দৃষ্টিতে বাকি নির্বাচন ছিল উনৌকা-ধানের শীষৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ। অপরদিকে বিএনপির দৃষ্টিতে পৌর নির্বাচন ছিল কারচুপির ও ভোট ছিনতাইয়ের।
দুই দলের নেতারা ঢাকায় যার যার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ ও তর্কযুদ্ধে মেতে ওঠেন। ভোটের পরিবেশ নিয়ে বিএনপির পরই সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ। বিএনপি নির্বাচন কমিশনে গেলে আওয়ামী লীগও যায়।
তর্কযুদ্ধ থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বয়কট করেনি বিএনপি-জাতীয় পার্টির কেউ। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার জেরে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মেয়র কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর খবর পাওয়া গেছে। বরগুনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বেশ কয়েকটি পৌরসভায় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মেয়ররাও সরে দাঁড়িয়েছেন। বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তবে বড় ধরনের কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার কথা কোনও দলই নজরে আনতে পারেনি। 
সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হলে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভী। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি বিষোদগার করে তিনি বলেন, নির্বাচনের শুরুতেই ‘আশঙ্কা’ সত্যি হয়েছে।

সকাল ১০টায় পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বিএনপির নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ তার।
এরপর বিএনপির নেতা ওসমান ফারুক তার প্রতিনিধি দল নিয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে কমিশনার মো. শাহনেওয়াজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের অভিযোগ- আড়াই ঘণ্টায় ৬০ কেন্দ্র দখল করেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। এরপরই প্রতিনিধি দল নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যান প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমাম। সেখানে এইচ টি ইমাম বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে চলছে। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অভিযোগ কাল্পনিক, বাস্তবসম্মত নয়। তবে তিনি স্বীকার করেন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছু বাড়াবাড়ি করছে।
এরপরই বেলা ১২টায় আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আরেকটি সংবাদ সম্মেলন করেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ। তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই করার অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, কুষ্টিয়ার কুমারখালি ও পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় বিএনপির কর্মীরা ব্যালট পেপার ছিনতাই করার চেষ্টা করেছে। তিনি এও বলেন, ফলাফল যাই হোক, সব দলকে তা মেনে নেওয়ার মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে।
এদিকে মাঠে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে দলগুলোর নেতাকর্মীরা সকাল থেকে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয়। যেসব পৌরসভায় হাড্ডহাড্ডি লড়াই হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, সাতকানিয়া, সীতাকুণ্ড, মতলব, সরিষাবাড়ি, কুয়াকাটা, কুমারখালি, মাধবদী, লাকসাম, রাজশাহীর তাহেরপুর, সরূপকাঠি, যশোরের কেশবপুর, মৌলভীবাজারসহ বেশ কিছু এলাকা।
ভোট শেষে বিকাল ৪টার কিছু পরে গুলশানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা আগেই বলেছি এটা প্রহসনের নির্বাচন। নীলনকশার নির্বাচন। নির্বাচনে থাকব এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে আমরা শেষ পর্যন্ত ছিলাম। যেসব কেন্দ্রে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সেসব কেন্দ্রে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানান ফখরুল।
বিএনপির অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরাই এগিয়ে থাকবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন হানিফ।

 

/এফএ/