ঘোষিত নীরব এলাকাতেও এত শব্দদূষণ!





বাংলাদেশ সচিবালয়সচিবালয়ের চারপাশকে সরকার নীরব এলাকা ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ এখানে শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা হবে ৫০ ডেসিবলের নিচে। কিন্তু ঘোষণার পর গত এক বছরের বেশি সময়জুড়ে একদিনও কি শব্দের এই মাত্রা ৫০ ডেসিবলের নিচে ছিল? এমন প্রশ্নে একটি সমীক্ষা বলছে না, কখনোই তা ছিল না। সঙ্গত কারণে প্রশ্ন জেগেছে ঘোষিত নীরব এলাকাতেও এত শব্দদূষণ কেন?


গত বছর ১৭ ডিসেম্বর সচিবালয়ের চারপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। শুরুতে হর্ন বাজানোর কারণে জরিমানা করার জন্য পরিবেশ অধিদফতর মোবাইল কোর্টও পরিচালন করে। কিন্তু একসময় এসব কিছুই থমকে যায়। ফলে এই এলাকা যেমন ছিল আবার তেমনই হয়ে যায়।
গত ১৪ থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৯ দিন সচিবালয়ের চারপাশের ১২টি পয়েন্টে শব্দের মাত্রার জরিপ করে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধীন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। মোট নয়দিনে জরিপে যে ফলাফল উঠে এসেছে তাতে পরিস্থিতি উন্নতির আশা নেই।
গবেষণায় বলা হচ্ছে, গত বছরের তুলনায় চলতি সচিবালয়ের চারপাশের ৫ থেকে ৬ ভাগ শব্দদূষণ কম হচ্ছে। অর্থাৎ উন্নতি হয়েছে। একই সময় ১৫ ভাগ গাড়িও কম চলছে। গাড়ির হিসাব করলে ১৫ ভাগ দূষণ কমার কথা। তা কিন্তু কমেনি। এ হিসেবে আবার দূষণ বেড়েছে।
ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশেষজ্ঞ ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা যে যন্ত্র দিয়ে ডাটা কালেক্ট করি, সেটা প্রতি মিনিটে ৬০টি ডাটা কালেক্ট করে। অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে একটা করে। আমরা সচিবালয়ের চারপাশের ১২টি লোকেশনে এই যন্ত্র বসিয়ে ডাটা কালেক্ট করেছি। সকাল বেলা ১০ মিনিট, দুপুর বেলা ১০ এবং বিকেল বেলা ১০ মিনিট ডাটা কালেক্ট করা হয়েছে। তিন বেলায় প্রতিটি লোকেশন থেকে মোট ১৮০০ ডাটা আমরা কালেক্ট করেছি। নয়দিনে এই ডাটার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজারের কাছাকাছি। শব্দদূষণের মানমাত্রায় কয়টা ডাটা ৭০ ডেসিবলের বাইরে গেলো আর কয়টা ভেতরে রইলো তা দিয়েই মূলত আমরা দূষণমাত্রার হিসাব করি। সচিবালয়ের পূর্বদিকে অর্থাৎ জিরো পয়েন্টে সেখানে গত বছর ১০০ ভাগ সময়ে ৭০ ডেসিবলের বেশি শব্দ ছিল, এবার সেটি ৯৬ ভাগেই ৭০ ডেসিবলের বেশি আসছে। বাকি চারভাগ সময়ে ৭০ ডেসিবলের কম আছে। তবে নীরব এলাকা ঘোষণা দিলে এই এলাকায় দিনের বেলা ৫০ ডেসিবল এবং রাতের বেলা ৪৯ ডেসিবল থাকার কথা।
৯ দিনের মধ্যে ২১ ডিসেম্বর দূষণের মাত্রা ছিল বেশি। এদিন ১২টি লোকেশনের দূষণের মাত্রা হচ্ছে, শিক্ষাভবনে ৯৭ ডেসিবল, সচিবালয়ের ১ নম্বর গেট ৯৪ ডেসিবল, সচিবালয়ের ৩ নম্বর গেট ১০৬ দশমিক ৫, সচিবালয়ের দক্ষিণ পূর্ব ৯৭, জিরো পয়েন্ট ১১৫, সচিবালয়ের মধ্য-পূর্ব ৯১, পল্টন বাসস্ট্যান্ড ১০৯, সচিবালয়ের উত্তর ৯৯ দশমিক ৩, সচিবালয়ের উত্তর-পশ্চিম ৯৫ দশমিক ৮, সচিবালয়ের পশ্চিম (মসজিদ) ৯২ দশমিক ৩, প্রেসক্লাব ১০২, কদম ফোয়ারা ১০৭ দশমিক ৯।
প্রসঙ্গত, শ্রাব্যতার সীমা ডেসিবল এককে হিসেব করা হয় না। ডেসিবল হলো শব্দের তীব্রতা পরিমাপের একক, অর্থাৎ কোন শব্দ কতটা জোরে বাজছে তার পরিমাপ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানুষ সাধারণত সর্বোচ্চ ১৪০ ডেসিবল শব্দ সহ্য করতে পারে, ১৫০ ডেসিবল কানের পর্দা ফাটিয়ে দিতে পারে এবং ১৮০-২০০ ডেসিবলে মৃত্যু ঘটাতে পারে।