মুজিববর্ষের উপহার: হাসি ফুটছে শরণখোলার বাঁকে

ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যায় বছরের পর বছর কুঁড়েঘরে চলেছে জীবনযুদ্ধ। শেষে একটি সেমিপাকা বাড়ির মধ্যে আবারও নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বাগেরহাটের শরণখোলার শতাধিক পরিবার। মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৬৯ হাজার ৯০৪টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর দিচ্ছে সরকার। শনিবার (২৪ জানুয়ারি) শরণখোলার ৯২টি পরিবার পেতে যাচ্ছে সেই ঘর। আর তাই এখন প্রধানমন্ত্রীর নাম শুনলেই হাসি ফোটে শরণখোলার এসব মানুষের মুখে।

শনিবার একসঙ্গে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ করে খাসজমির মালিকানা দিয়ে দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ঘর পাচ্ছেন শরণখোলার মিঠুন কুমার বিশ্বাস। স্ত্রী মৌসুমী রানী ও এক সন্তানসহ তিন সদস্যের পরিবার। মিঠুন কুমার পেশায় দিনমজুর। নিম্নআয়ের এই পরিবার গত ৮ বছর ধরে পরিবেশগত প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে জীবনসংগ্রাম চালিয়ে আসছে। নতুন ঘর পেয়ে তারা উচ্ছ্বসিত।

মৌসুমী রানী বলেন, ‘এত বছর দোচালা কুঁড়েঘরে ছিলাম। ঝড় আসলে যাইতাম আশ্রয় কেন্দ্রে। ঘর তছনছ হয়ে যাইত। আবার এই ঘর ঠিক করা লাগতো। সেটা করতে বছর পার। প্রধানমন্ত্রী ঘর দিবেন শুইনা উপজেলায় আবেদন করসিল আমার স্বামী। তারপর ঘর পাইলাম। প্রধানমন্ত্রী না দিলে এমন ঘর কোনও দিন কপালে জুটতো না। ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রীকে।’

মিঠুন কুমারের পাশের জায়গায় আরেকটি ঘর পেয়েছেন সুজন হাওলাদার। তার স্ত্রী অপর্ণা রানী বলেন, ‘বৃষ্টির দিন টিনের চালের ফুটা দিয়ে পানি পড়তেই থাকে। ঝড় হইলে বাতাসে চাল নিয়ে যাইতো উড়াইয়া। এসব লইয়া ১২ বছর আছি। প্রধানমন্ত্রী ঘর না দিলে এভাবেই চলা লাগতো। এখন আর কষ্ট হইব না।’

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তফা শাহীন বলেন, ‘এই উপজেলার প্রায় ২০০ পরিবারকে এই সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। এই মুহূর্তে ১২৩টি বাড়ির কাজ চলছে। বাকিগুলোর লেআউট করা হয়েছে। অচিরেই কাজ শেষ হবে।’

আশ্রয়ন প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৪টি প্রকল্প-গ্রামে ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ন নামে তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লক্ষ ২০ হাজার ৫২টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০২০ সালের জুনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীন ৮ লক্ষ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারের তালিকা করা হয়।