বেলা ১২টার দিকে সেলিম আহমেদ মোটরসাইকেলে করে রাজধানীর হাতিরপুলে মোতালেব প্লাজার সামনে এসে দাঁড়ান। তখনই তিনি তার পরিচিত দোকানে ফোন দেন। উদ্দেশ্য তার মোবাইল ফোনের চার্জের সমস্যা ঠিক করা। দোকানের কর্মচারী রাস্তার মাঝামাঝি ডিভাইডারে অপেক্ষমান ছিলেন। সেখান থেকে তার ফোন মার্কেটের ভেতরে পাঠিয়ে দেন ওই কর্মচারী। সেটি দেখে কিছুক্ষণ পর তাকে জানানো হয় সেটি ঠিক করতে লাগবে আধাঘণ্টা। অতঃপর তিনি হাফ ছেড়ে বাঁচলেন।
অন্যদিকে অনলাইনে নানারকম পণ্যের ব্যবসা করেন তানিয়া। তিনি ভরদুপুরে গাউসিয়া এলাকায় অনেকগুলো ব্যাগ হাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হলে – তিনি বলেন অনলাইনের ব্যবসার কিছু টুকটাক জিনিসপত্র প্রয়োজন। তার জন্য আসা। কিন্তু মার্কেট তো বন্ধ তাহলে পাচ্ছেন কিভাবে – জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরানো পরিচিত দোকান তো ফোনে কথা বলে চলে আসছি নিতে।
করোনা সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে কঠোর বিধিনিষেধ পালনের ঘোষণা দেয় সরকার। এসময় মার্কেট বন্ধের ঘোষণা থাকলেও শুরু থেকেই এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে গিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন গাউছিয়া ও নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। রাজধানী ঢাকার বাইরেও বিভাগীয় শহর রাজশাহী, সিলেটসহ কয়েকটি শহরে মার্কেট খোলার রাখার দাবিতে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ করেন। দ্বিতীয় দফায় আবারও এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। তখন সরকারি-বেসরকারি সব অফিসসহ ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর আর ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ করেননি। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান শপিং মল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিক্রেতারা জানান, করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের বিধি-নিষেধের কারণে পহেলা বৈশাখের ব্যবসা হয়নি। তারপর চলমান লকডাউনের কারণে ঈদ-কেন্দ্রিক ব্যবসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। গতবার ঈদের সময় কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমসিম খেতে হয়েছে। এবার তাই কিছুটা লাঘব করার জন্য হলেও মার্কেট বন্ধ থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ এই সার্ভিস দেয়। তবে সবাই দিচ্ছে না।
গাউসিয়ায় ইসমাইল ম্যানশনের সামনে দেখা যায়, সেই মার্কেটে অবস্থিত দোকানের কর্মীরা মার্কেটের সামনেই অপেক্ষমাণ। একজনের কাছে জানতে চাওয়া হলো – এখানে কেন আপনারা? তারা উত্তর দিলে এমনেই। একই দৃশ্য দেখা যায় মার্কেটের ওপর পাশের দোকানগুলোর সামনে। সেখানে ফুটপাথেই বসে ছিলেন তারা। দোকানের একজন কর্মীর কাছে জানতে চাইলে – তিনিও কোন জবাব দিলেন না। একটু পর মার্কেটের গেট খোলা হলে ১০-১২ জন কর্মী মার্কেটের ভেতরে চলে যান। এসময় নিরাপত্তারক্ষীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দোকান আছে ওদের তাই যায়। এর বেশিকিছু তিনি বলতে রাজি হননি।
একই দৃশ্য দেখা যায় ইসমাইল ম্যানশন থেকে কিছুদূর গেলে ইস্টার্ন মল্লিকার সামনে। সেখানে মূল প্রবেশ পথ বন্ধ থাকলেও, এটিএম বুথের পাশের ছোট একটি গেট খোলা ছিল এবং সেখানে নিরাপত্তারক্ষী দোকানের কর্মীদের প্রবেশ করতে দিচ্ছেন। আবার কিছু কর্মী হাতে করে দোকানের বিক্রয়ের মাল হাতে করে নিয়ে বের হচ্ছেন। তার কাছে জানতে চাইলে নিজেকে দোকানের কর্মী পরিচয় দেন এবং বলেন এগুলা অর্ডারের মাল। এসময় নিরাপত্তারক্ষীর কাছে দোকান খোলা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চান – ভিতরে দোকানের মালিক কিনা, নাহলে কিছু বলতে রাজি না। এসময় মার্কেটের ভেতরেও অনেকেকে অবস্থান করতে দেখা যায়।
পাশেই আরেকজন টেকনিশিয়ান বলেন, করোনায় এখন সবারই অবস্থা খারাপ। মার্কেট বন্ধ করে আরও খারাপ অবস্থা হয়ে গেছে। দৈনিক কোন আয় নাই।
এই এলাকার স্থানীয়রা জানান, যারা বসে আছে এরা সবাই মোবাইল টেকনিশিয়ান, সবারই মার্কেটে দোকান আছে। বাইরে দুই চারজন কাস্টমার আসে তারা ভিতরে মোবাইল পাঠায় দেয় ঠিক করার জন্য।