দেশে ফিরতে না পেরে পেট্রাপোল সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের বিক্ষোভ

বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ভারতের সঙ্গে সীমান্ত রুটগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বেশ কয়েকশ’ বাংলাদেশি নাগরিক পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল সীমান্তে আটকা পড়েছেন। সীমান্তের চেকপোস্ট পেরোতে না পেরে সোমবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তারা বিক্ষোভ করেন।  যদিও পরে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত করা সম্ভব হয়েছে।

নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে যাতে তারা ই-মেইলে কলকাতায় বাংলাদেশের উপদূতাবাসে আবেদন করে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নিতে পারেন, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের কর্মকর্তারাও এখন তাদের সেই পরামর্শ দিচ্ছেন। 

এর আগে গত রবিবার (২৫ এপ্রিল) বিকালে বাংলাদেশ সরকার ভারতের সঙ্গে স্থল-সীমান্তগুলো দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয় সোমবার (২৬ এপ্রিল) সকাল থেকেই।  কিন্তু তারপরও সোমবার সারাদিন ধরে অজস্র বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফেরার জন্য ভারতের বনগাঁ শহরের কাছে পেট্রাপোল সীমান্তে এসে হাজির হন। 

এরা প্রায় সবাই মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে এসেছিলেন, রোগীদের সঙ্গে ছিলেন তাদের আত্মীয়-পরিজনরাও। ছিলেন ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া অনেক ছাত্র-ছাত্রীও। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, নিকটবর্তী মিশন বা দূতাবাস থেকে তাদের যে ছাড়পত্র সংগ্রহ করার কথা, তাদের প্রায় কারও কাছেই সেটা ছিল না। 

ক্যান্সারের রোগী, সাতক্ষীরার করিমুন্নিসা বেগম চিকিৎসার জন্য ভারতে এসেছিলেন সড়কপথেই। কিন্তু সোমবার সীমান্ত বন্ধ হওয়ার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি দেশে ফিরতে গিয়ে তিনি আটকা পড়েন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি পেট্রাপোলে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের বলেন, ‘আমাদের সব টাকা শেষ। আর একটা দিনও ভারতে থাকার সাধ্য নেই।’

অনেকটা একই রকম অবস্থা নড়াইলের স্কুলছাত্রী রিয়া মণ্ডলের, তিনি বাবা-মার সঙ্গে ভারতে এসেছিলেন একটা অস্ত্রোপচার করাতে। তিনি কাতর আবেদন জানান সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি, ‘দয়া করে আপনি আমাদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করুন।’ কুষ্টিয়ার স্বপন কুমার বিশ্বাস তো আরও একধাপ এগিয়ে মন্তব্য করেন, ‘এভাবে ভারতে আটকা পড়লে আমরা তো না-খেয়ে পড়ে থাকবো।  তার চেয়ে বরং দেশে ঢুকতে গিয়ে গুলি খেয়ে মরাও ভালো!’     

দূতাবাসের এই নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে আবেদন করতে হবেপেট্রাপোল সীমান্তে ভারতের ইমিগ্রেশন বিভাগের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা তরুণ বিশ্বাস অবশ্য বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার সীমান্ত সিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই আমরা বর্ডার গেট বন্ধ রেখেছি। ওপরতলার নির্দেশ আছে, বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে যারা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) আনবেন, তাদেরই কেবল সীমান্ত পেরোতে দেওয়া হবে। ওটা না থাকলে আমরাও কিন্তু নিরূপায়!’

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের সূত্রগুলো অবশ্য এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, দিল্লি তো বটেই, কলকাতা, মুম্বাই, আগরতলা ও গুয়াহাটিতে তাদের মিশনগুলোও এই ছাড়পত্র ইস্যু করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়েছে। যে ফর্মে বাংলাদেশি নাগরিকদের এ জন্য আবেদন করতে হবে। সেটি পোস্ট করা হয়েছে হাই কমিশনের ফেসবুক পেজেও (https://www.facebook.com/bdhcdelhi)। 

সূত্র আরও জানায়, ‘তবে আমাদের ধারণা, নিয়মটা ভালোভাবে না-জেনেই ভারতে থাকা অনেক বাংলাদেশি নাগরিক সোমবার পেট্রাপোল সীমান্তে চলে গিয়েছিলেন এবং এ জন্য তাদের অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। তবে তাদের এনওসি ইস্যু করে শিগগিরই দেশে ফেরানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’, জানান দূতাবাসের ওই সূত্রটি।

তবে আন্তর্জাতিক স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারলেও এই যাত্রীদের যে এরপর নির্ধারিত কয়েকদিন নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে, সেই আগাম মুচলেকাও তাদের দিতে হচ্ছে।