চলমান লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে দেশে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু সেই শর্ত কোথাও পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। পরিবহনগুলোতে দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা কিংবা মাস্ক পরিধান করতে অনীহা দেখা গেছে চালক ও হেলপারের মধ্যে। নগরীর বিভিন্ন টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
গত ২৩ মে দূরপাল্লার বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়ার পর বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করে বাস মালিক সমিতি। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে- মাস্ক ছাড়া কোনও যাত্রী গাড়িতে ওঠানো যাবে না। চালক, সুপারভাইজার, হেলপার এবং টিকিট বিক্রিতে নিয়োজিতরাও মাস্ক পরবে। তাদের হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাবান-পানি, হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।
কিন্তু পরিবহনগুলোতে এসব নির্দেশনার কিছুই পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। দূরপাল্লার বাসগুলোতে অর্ধেক আসনে যাত্রী পারিবহন কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও সিটি সার্ভিসে স্বাস্থ্যবিধি বেশি ভাঙা হচ্ছে। প্রতিটি আসনে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। তবে দূরপাল্লার বাসগুলোতে একই পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি আসনে বসতে দেখা গেছে।
এমন চিত্র প্রায় প্রতিটি গণপরিবহনের। তবে যাত্রীদের অভিযোগ তারা অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে পরিবহন করতে চান না। কিন্তু যখন চাহিদা অনুযায়ী গণপরিবহন পান না তাখনই তারা বাধ্য হন।
পল্টনের একটি বেসরকারি অফিসে চাকরি করেন আবুল কাশেম। তিনি প্রতিদিন মিরপুর থেকে বাসেই যাতায়াত করেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সকালের অফিস টাইমে যে পরিমাণ গণপরিবহন থাকার কথা সে পরিমাণ পাওয়া যায় না। প্রতিটি পরিবহনেই অতিরিক্ত যাত্রী। মানুষও বাধ্য হয়ে পাশাপাশি আসনে বসে। ভাড়াও ৬০ শতাংশ বেশি আদায় করা হচ্ছে।’
লঞ্চের চিত্রও একই। কোথাও তদারকি নেই। হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বা তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। গাদাগাদি করে তোলা হচ্ছে যাত্রী।
সদরঘাট থেকে হাতিয়াগামী লঞ্চ তাসরিফ-১ এর যাত্রী সামছুদ্দিন বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি বলতে কিছুই নেই। লঞ্চে ওঠার সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজিং হচ্ছে না। যাত্রী তো দূরের কথা লঞ্চের আনসার সদস্যরাও মাস্ক পরছেন না। সিঙ্গেল কেবিনে দুই থেকে তিনজন পর্যন্ত উঠছেন। ডেকে গাদাগাদি করে যাচ্ছে সবাই। অনেকে দলবেঁধে গল্প করছেন। কোথাও কোনও তদারকি নেই। ভাড়া কিন্তু ৬০ ভাগ বেশি নেওয়া হচ্ছে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঢাকা নদীবন্দরের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। প্রতিটি পন্টুনে আনসার নিয়োজিত রয়েছেন। বেশি যাত্রী যাতে তোলা না হয় সে জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।’
কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে রেল চলছে। জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। স্টেশনে ঢোকার আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে। যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রাও মাপা হচ্ছে। আমরা যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালন করছি তা অন্য কোনও গণপরিবহনে নেই।’
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘এখন আমাদের ১০৮টি আন্তনগর ট্রেন রয়েছে। তার মধ্যে ২৮ জোড়া তথা ৫৬টি ট্রেন চালাবো। এতে অর্ধেক আসন ফাঁকা থাকবে। টিকিট অনলাইন থেকে সংগ্রহ করতে হবে। সংক্রমণের কারণে কাউন্টারে কোনও টিকিট রাখা হয়নি।’