বজ্রপাতে পুরুষ মৃত্যু বেশি কেন?

২০১৬ সালে নয়াদুর্যোগ তালিকায় নাম ওঠে বজ্রপাতের। জনজীবনে ধাতব পদার্থের ব্যবহার বেড়ে যাওয়া, মোবাইল ফোন ব্যবহার, প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং গ্রামাঞ্চলে উঁচু গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে। আর ডিজাস্টার ফোরামের প্রতিবেদন বলছে, বজ্রপাতে মৃতদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশ। কিন্তু কেন?

ডিজাস্টার ফোরামের তথ্য বলছে, এ বছরের ১৭ জুন পর্যন্ত বজ্রপাতে মোট মারা গিয়েছেন ২২৫ জন (এপ্রিল মাসে ৭ জন, মে মাসে ১২০ জন এবং জুন মাসে এখন পর্যন্ত ৯৮ জন)। এর মধ্যে শিশু ৫০, নারী ৩২ এবং পুরুষ ১৪৩ জন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করেছে সিরাজগঞ্জ জেলায়, ১৯ জন; চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও জামালপুর জেলায় ১৫ জন; নেত্রোকোনায় ১৩ এবং চট্টগ্রামে ১২ জন।  বিভাগ অনুসারে রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে বেশি ৬০ জন মারা গিয়েছেন এ বছরের বজ্রপাতে।

২০২০ সালে বজ্রপাতে মারা গিয়েছেন ৩৮০ জন। এর মধ্যে শিশু ৮০, নারী ২৯ এবং পুরুষ ২৭১ জন।

বাংলাদেশে বছরে ৮০ থেকে ১২০ দিন বজ্রপাত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব জিওগ্রাফির অধ্যাপক ড. টমাস ডব্লিউ স্মিডলিনের ‘রিস্ক ফ্যাক্টরস অ্যান্ড সোশ্যাল ভালনারেবিলিটি’ শীর্ষক গবেষণা মতে, ‘প্রতিবছর মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৪০টি বজ্রপাত হয়।’ বছরে দেড়শ’র মতো লোকের মৃত্যুর খবর বিচ্ছিন্নভাবে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা ‘পাঁচ শতাধিক’ বলে আবহাওয়া-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলে থাকে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের হাওর এলাকায় বেশির ভাগ ফসলি জমিতে বড় কোনও গাছ নেই। বজ্রপাতের ধর্ম হচ্ছে তা মাটিতে আঘাত হানার আগে সবচেয়ে উঁচু যে জায়গাটি পায় সেখানে গিয়ে পড়ে। হাওর এলাকায় কৃষকের শরীরই মাটির চেয়ে উঁচু থাকে। ফলে তারা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট  হন আগে। এমনকি কৃষিতে ধাতব যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়ে যাওয়াকেও কারণ হিসেবে দেখছেন তারা। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগে কৃষিতে ধাতব যন্ত্রপাতির ব্যবহার ছিল না বললেই চলে। এখন মাঠে ধাতব যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়ে গেছে। ফলে মাঠে কাজ করা মানুষ আক্রান্ত হয় বেশি।

বজ্রপাতে যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই খোলা মাঠে কাজ করছিলেন বা মাছ ধরছিলেন উল্লেখ করে ডিজাস্টার ফোরামের সমন্বয়কারী মেহেরুন নেসা ঝুমুর বলেন, ‘গত দেড় মাসে বজ্রপাতে বেশি মানুষ মারা গেছে সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও জামালপুরে। বিভাগ অনুসারে রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে বেশি। মৃতদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা নারীর সংখ্যার তিন গুনের বেশি। পুরুষের মৃত্যু বেশি হওয়ার কারণ, দেশীয় কৃষি বাস্তবতায় মাঠে পুরুষ বেশি সময় কাজ করে থাকেন।