রাজধানীতে ‘ফিরেছে’ যানজট

ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে আরোপিত বিধিনিষেধ আগামীকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে শিথিল করা হয়েছে। কিন্তু একদিন আগেই আজ মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) রাজধানীর সড়কগুলোর বিভিন্ন জায়গায় তীব্র যানজট লক্ষ্য করা গেছে। গণপরিবহনগুলো না চললেও প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, জরুরি সেবা সংস্থার গাড়ি এবং খোলা থাকা অফিসের কর্মীদের বহনের গাড়িতে অনেকটাই পুরনোরূপে ফিরেছে রাজধানীর ট্রাফিক সিগন্যালগুলো। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেকপোস্ট থাকলেও তা চলছে ঢিলেঢালাভাবেই। এমনকি বিভিন্ন এলাকার অলিগলির পাশাপাশি প্রধান সড়কের কিছুটা আড়ালের দোকানপাটও খুলতে দেখা গেছে।

করোনা মহামারিতে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে চলে গেলে গেল ১ জুলাই থেকে সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। তবে তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি। গতকালও আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৩ হাজার ৭৬৮ জন মানুষের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্তের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। যা মহামারিকালে একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত শনাক্ত। এই সময়ে মারাও গেছেন ২২০ জন। এমন পরিস্থিতিতে চলমান লকডাউনে বিধি ভঙ্গ করে গত কয়েকদিন ধরেই সড়কে জনসমাগম দেখা যাচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার লকডাউনের ১৩তম দিনে সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিধিনিষেধ পরিপালনে অনীহা লক্ষ্য করা গেছে। সকাল থেকে নগরীর দৈনিক বাংলা, ফকিরাপুল, আরামবাগ, কমলাপুর, কাকরাইল, পল্টন, শাহবাগ, বাংলামোটর, কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে প্রায় একই রকম চিত্র পাওয়া গেছে। ফকিরাপুলে দায়িত্বপালনকারী পুলিশ সদস্য ইসমাইল বলেন, আজ যানবহন আর রিকশার সংখ্যা বেশি দেখছি। রাস্তায় যানজটও আছে। প্রতি সিগন্যালে দুই থেকে তিন মিনিট করে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

সকালে খিলগাঁও রেলগেট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে বিপুল সংখ্যক মানুষ যাতায়াত করছে। পুলিশের কোনও তৎপরত নেই। সাধারণ মানুষ নিজেদের মতো এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করছেন। সবকিছু স্বাভাবিক সময়ের মতোই চলছে, শুধু বাস চলছে না। এর ফলে রিকশায় কিছুটা চাপ বেড়েছে, অনেকেই রিকশা না পেয়ে মালবাহী ভ্যানেও উঠে বসেছে গন্তব্যে পৌঁছতে। এই এলাকার বেশ কিছু দোকান খোলা দেখা গেছে।

রিকশাজট

একই চিত্র কমলাপুর এলাকায়। সেখান থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ রিকশাযোগে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করছে। চলছে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল এবং সিএনজিও। লকডাউনের শুরুর দিক থেকেই পুলিশের চেক পোস্টগুলোতে ব্যাপক তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেলেও আজ তা দেখা যায়নি। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা চেকপোস্টের পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও কোনও তৎপরতা ছিল না তাদের মাঝে। খিলগাঁও আনসার ক্যাম্প সংলগ্ন চেকপোস্টেও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে পাশের যাত্রী ছাউনিতে বসে থাকতে দেখা গেছে।

ফকিরাপুল ট্রাফিক সিগন্যালে দীর্ঘ সময় ধরে যানজট দেখা গেছে। প্রতিটি যানজটে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য সিরাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অন্যদিনের তুলনায় আজ রাস্তায় প্রচুর মানুষ, যানবাহনের সংখ্যাও বেশি। বিপুল পরিমাণ রিকশা যাত্রী পরিবহন করছে। তদারকি কম থাকায় মানুষ অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি করছে বলেও জানালেন এই পুলিশ সদস্য।

লকডাউনে মোটরসাইকেলে একজনের বেশি যাত্রী উঠলেই শুরু থেকে মামলা দিয়ে আসছে পুলিশ। এতদিন তাই মোটরবাইকের সংখ্যা বেশ কমই ছিল। তবে আজ মোটরসাইকেলগুলোতেও দুজন করে যাত্রী দেখা গেছে। এগুলোর মধ্যে কতগুলো ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলও চলতে দেখা গেছে। 

বিধিনিষেধ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জানতে চাইলে আরিফুর ইসলাম নামে রিকশাচালক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কিসেরও লকডাউন? পুলিশ তো কোনও কিছু বলছে না। মানুষও (যাত্রী) রাস্তায় বের হচ্ছে, আমরাও বের হচ্ছি। না থাকলেতো রিকশা চালাইতাম না।