‘শিথিলের’ শেষদিনে সদরঘাটে উপচে পড়া ভিড়

ঈদুল আজহা উপলক্ষে শিথিল করা হয়েছিল লকডাউন। তবে সেই ঘোষণায় এও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে ঈদের তৃতীয় দিন থেকে ফের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আগামীকাল শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে গণপরিবহন চলাচলসহ সবকিছু বন্ধ থাকবে। ‘শিথিলের’ শেষদিনে আজ বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) রাজধানীর সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত ঈদের পরে রাজধানীমুখী গণপরিবহনগুলোতে ভিড় লক্ষ করা গেলেও এ বছর তা ভিন্ন। আগামীকাল থেকে পোশাক কারখানা থেকে শুরু করে সবকিছুই ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৪ দিন বন্ধ থাকবে। তা ছাড়া লকডাউনের মধ্যে মাত্র কয়েকদিন সবকিছু খোলা থাকায় অনেকেই ছুটিও পাননি। অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম গুছিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে যারা ঈদে গ্রামে যাননি তারা এখন পাড়ি জমাচ্ছেন।

করোনার ভয়াবহ প্রকোপ কমাতে জারি করা কঠোর বিধিনিষেধ শিথিলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, গণপরিবহন চলবে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। তবে দক্ষিণবঙ্গগামী সদরঘাটের এসব লঞ্চে তা মানা হচ্ছে না। অর্ধেক যাত্রী তো দূরের কথা, অনেক ক্ষেত্রে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ বেশি যাত্রী নিয়ে ছুটছে লঞ্চগুলো। মাত্রাতিরিক্ত যাত্রীতে ভরে গেলেও কোনও লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য লঞ্চঘাটে বিআইডব্লিউটিএ'র পক্ষ থেকে দায়সারাভাবে মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা!

বৃহস্পতিবার বিকালে নদীবন্দর সদরঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, মানুষের ভিড়ে ঠিকমতো চলাচল করা যাচ্ছে না ঘাট এলাকায়। পা ফেলার জায়গা নেই পন্টুন কিংবা কোনও লঞ্চে। ছাদ থেকে শুরু করে এবং কেবিনের মাঝের গলিতেও মানুষ বিছানা বিছিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। এতে চরম কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধদের। লঞ্চগুলোতে তীব্র গরমে সেদ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

হাতিয়াগামী লঞ্চ ফারহান-৪-এ দেখা গেছে মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। লঞ্চের ভেতরে চলাচল করা যাচ্ছে না। অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে গেলেও লঞ্চটির ছেড়ে যাচ্ছে না। ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময় বিকাল ৫টায় হলেও দুপুর ১টার মধ্যেই অতিরিক্ত যাত্রীতে ভরে গেছে লঞ্চটি।

2

ঢাকা-নাজিরপুর-লালমোহনগামী লঞ্চ গ্লোরি অব শ্রীনগর-২-এর চিত্রও একই। লঞ্চের ভিতরে দাঁড়ানোর  জায়গা নেই। অতিরিক্ত যাত্রী হওয়ার পরও কেন রওনা হচ্ছে না জানতে চাইলে লঞ্চটির একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের এখনও লঞ্চ ছাড়ার সময় হয়নি। যখন সময় হবে তখন ছেড়ে যাবে। অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে কেউ লঞ্চে উঠলে সেই দায় কার? আমাদের কী করার থাকে? কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিলে তো ভালো। তারাও তো দায়সারা পদক্ষেপ নিচ্ছে। সব দোষ শুধু কি লঞ্চ মালিকদের?

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে যাত্রীদের বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। টার্মিনালে পন্টুনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। মাইকিং করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রয়েছে। কর্মীরা কাজ করছেন। যাদের জন্য এই ব্যবস্থা তারাই তো মানছেন না। 

তিনি আরও বলেন, বারবার আমরা যাত্রীদের মাস্ক পরার কথা বলছি। এছাড়া যাত্রীদের স্বাস্থ্য সচেতনতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নৌ-পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত আছেন। যাত্রী বেশি হলে লঞ্চ ছাড়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।