হাসেম ফুড কারখানায় অগ্নি দুর্ঘটনা ‘ওয়েক আপ কল’

নারায়ণগঞ্জের হাসেম ফুড কারখানায় অগ্নি দুর্ঘটনায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনাটি ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনায় চলে এসেছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে; যেমনভাবে তারা যোগাযোগ করেছিল ২০১৩ সালে। ওই বছরে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ১১০০ এর বেশি শ্রমিক নিহত হওয়ার পরে তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বড় ধরনের পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। একই ধরনের উদ্যোগ তৈরি পোশাক শিল্পের বাইরে যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে সেগুলোর জন্য নেওয়া দরকার বলে মনে করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে বিদেশিদের পরামর্শের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেদেরই এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া দরকার বলেও মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, নারায়ণগঞ্জে খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটিতে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেটি ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক রাডারে চলে এসেছে। রানা প্লাজা যেমন তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য একটি ‘ওয়েক আপ কল’ হিসেবে কাজ করেছিল, তেমনি তৈরি পোশাক শিল্পের বাইরে যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে সেগুলোর জন্য এই দুর্ঘটনা একটি ‘ওয়েক আপ কল’ হিসেবে কাজ করবে।

তিনি বলেন, আমরা যদি অবিলম্বে এ বিষয়ে কাজ না করি এবং এ সংক্রান্ত যে নিরাপত্তা বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো নিশ্চিত না করি- তাহলে ভবিষ্যতে আবারও এধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।

বিদেশিদের জন্য অপেক্ষা নয়
পররাষ্ট্র সচিব মনে করেন, দেশের স্বার্থেই প্রয়োজনীয় সংস্কার নিজেদের করা উচিৎ এবং এজন্য বিদেশিরা কী পরামর্শ দেবে বা দিতে পারে সেটির জন্য অপেক্ষা করা ঠিক নয়। বিদেশিরা আমাদের বলে দেবে, আমরা তারপরে কাজ শুরু করবো, বিষয়টি সেভাবে না দেখে আমাদের নিজেদেরই এখন কাজ শুরু করা উচিৎ।

এই ইস্যুটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং অন্যান্য অনেক দেশ জড়িত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ রফতানি বাজার বাড়াতে চায় কিন্তু এখানকার প্রতিষ্ঠানগুলো যদি কম্প্লাইন্ট না হয় এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে যায়, তাহলে কীভাবে বাজার বাড়ানো সম্ভব হবে। এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে এতগুলো মানুষ মারা গেল, কিন্তু এটাকে যেন আমরা ‘ওয়েক আপ কল’ হিসেবে দেখি এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে এখনই আমাদের কাজ শুরু করা উচিত।

মার্কিন সিনেটে উপস্থাপিত একটি শ্রম বিলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে। শ্রম অধিকার মানবাধিকার বিষয়গুলি বাইডেন প্রশাসনের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে ডেমোক্রেটদের ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অবিলম্বে যদি কাজ শুরু না করি তবে ভবিষ্যতে একদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আরেকদিকে আইএলও এ বিষয়ে চাপ দেবে। এই জন্য আমাদের দ্রুত কাজ করতে হবে।’

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এই বিষয়ে বাংলাদেশে কাজ করতে আগ্রহী বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আইএলও'র কর্মকর্তাদের সাথে আমাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন (ফাইল ছবি)

সামাজিক প্রতিরোধ
অভিযোগ আছে দুর্ঘটনা কবলিত কারখানাটিতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও শিশু শ্রমিক কাজ করতো এবং এটির একটি তদন্ত হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন মাসুদ বিন মোমেন।

সেই সঙ্গে প্রায়শই বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের সময় গেটে তালা দেওয়া থাকা প্রসঙ্গেও কথা বলেন পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, শিল্প-কারখানায় দুর্ঘটনা রোধ করার জন্য সামগ্রিকভাবে গোটা সমাজেরই কাজ করা দরকার। বাংলাদেশ একটি কালচার আছে যে কলাপসিবল গেটে তালা মেরে রাখা হয়, কিন্তু এই নির্দেশ মালিকপক্ষ দেয় নাকি যারা সুপারভাইজার বা ম্যানেজার কাজটি করে থাকে সেটি জানা দরকার। এটি কোনও ম্যানুয়ালে লেখা নাই যে তালা মেরে রাখতে হবে, কিন্তু তারপরও কেন হচ্ছে- এই প্রশ্নটা সবারই করা উচিত।

এসব দুর্ঘটনা রোধে বিদেশিরা বলবে তারপরে আমরা কাজ করবো- বিষয়টি সেভাবে দেখা ঠিক না, মন্তব্য পররাষ্ট্র সচিবের।