আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস

বছরের পর বছর কাটে স্বজনদের অপেক্ষায়

‘আট বছর ধরে নিখোঁজ আমার ভাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হয়ে কোনও সন্ধান মেলেনি তার। এইসময়ে আমরা ১৬টি ঈদ পার করলাম তাকে ছাড়াই। হয় আমাদের আমাদের স্বজন ফিরিয়ে দিন, নইলে আমাদেরও গুম করেন’-এভাবেই আহাজারি করছিলেন নিখোঁজ সেলিম রেজা পিন্টুর বোন রেহানা বানু মুন্নী।

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে আজ সোমবার (৩০ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ‘মায়ের ডাক’ নামের সংগঠনের আয়োজনে এক স্মরণ সভায় এসেছেন তিনি। ২০১১ সাল থেকে দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে।

শুধু রেহানা বানু মুন্নীই নন, স্বজন হারানো প্রায় শতাধিক মানুষের স্বজনরা স্মরণ সভায় যোগ দিয়েছেন। তারা বলছেন, প্রিয় স্বজনকে ছাড়া বছরের পর বছর তাদের দুর্বিষহ দিন কাটছে। নিখোঁজ এই মানুষগুলোকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তাদের। এসময় নিখোঁজদের ছবিও প্রিন্ট করে সঙ্গে এনেছিলেন অনেকেই। 

অনুষ্ঠানে আসা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই বিভিন্ন সময়ে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন ২০ বছর বয়সী তরুণ আনোয়ার হোসেন। হাতে ধরেছিলেন ২০১১ সালে ২৪ জুন থেকে নিখোঁজ উত্তরা থানা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মনসুর হোসেন হিরোর ছবি। হিরো আনোয়ার হোসেনের চাচা। অনুষ্ঠানে আনোয়ারের বাবা, হিরোর বড় ভাই আমজাদ হোসেনও এসেছেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার ভাই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে ২০১১ সালে গুম হয়। আমরা জানতে পারি কয়েকজন লোক তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত আমরা তার খোঁজ পাই নাই। আমার ভাইকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই।

গুম-২

আরেক নিখোঁজ ব্যক্তি সাজেদুল ইসলাম সুমনের মেয়ে হাফসা ইসলাম বলেন, আমি একই জায়গায় ৮ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আমার বাবাকে খুঁজছি। কেউ আমার বাবার খোঁজ দিচ্ছে না। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলছি - আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই। আমার বাবা বেঁচে আছে না মরে গেছে আমি জানি না। আমার ছোট বোন বাবাকে কখনো দেখেনি। আমি শুধু আমার বাবাকে ফেরত চাই। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আর বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আকুতি জানাতে চাই না। আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন। 

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, আজ শুধু দেশের অভ্যন্তরে গুম হচ্ছে না। এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশে। পরে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আরেক জায়গায়। এই যে আন্তঃদেশীয় ব্যবস্থা, এটা কখনোই রাষ্ট্রীয় সম্মতি ছাড়া সম্ভব না। তাই অবিলম্বে এসব ঘটনা তদন্তে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। কমিশন তথ্য অনুসন্ধান করবেন, তদন্ত করবেন এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনবেন।