হাসেম ফুডসে অগ্নিকাণ্ড

নকশায় কোনও পরিবর্তন না হলেও মেয়াদ বাড়ে ৩ বছর 

অন্যসব আগুনের ঘটনার মতো হাসেম ফুডস লি. এর ভবনে আগুন ও ৫২ জন মারা যাওয়ার ঘটনার পর এই ভবনের নকশা ও ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন আছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠে। আর তার অনুসন্ধানে কেঁচো খুঁড়তে সাপ পাওয়ার মতোই অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করার বেআইনি সব নথি বেড়িয়ে আসে। 

সোমবার (৩০ আগস্ট) একাত্তর টেলিভিশনের নিয়মিত আয়োজন একাত্তর জার্নালের এক প্রতিবেদনে এই অনিয়মের খবর জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসেম ফুডস লি. এর ভবনের নকশা অনুযায়ী ভবন থেকে বের হওয়ার কোনও জরুরি নির্গমন পথ বা সিঁড়ি ছিল না। ৩৬ হাজার স্কয়ার ফিটে অন্তত ৪টি সিঁড়ি থাকার নিয়ম থাকলেও ছিল দুটি। খোলা জায়গায় ছিল গুদাম। এ ছাড়া ভবনের ভেতরে তিন শ’ কিলোওয়াটের বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন ছিল। এমনকি ভবন লাগোয়া ছিল তিনটি বয়লার। 

জেনেশুনে সেই নকশায় অনুমোদন দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, যেহেতু ফায়ার বিগ্রেড আন্ডার টিকেন দিয়েছে, যেখানে হলফনামা দিয়েছে তিন শ’ টাকার স্ট্যাম্পে; যেকোন অগ্নিকাণ্ড ও শ্রমিক মৃত্যু হলে সে দায়ী বা তার দায়িত্ব আছে। ৫২ জন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছে এবং সেখানে শিশুশ্রম আছে। শ্রম আইনও সেখানে প্রতিপালন করা হয়নি। ফলে প্রথম দায় তার মালিককেই নিতে হবে। এরপর সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রথম দায় হচ্ছে ফায়ার বিগ্রেডের। তাদের দায়িত্বই হচ্ছে প্রধান। 

জানা গেছে, যেকোন কলকারখানার ভবন নির্মাণের আগে ফায়ার সার্ভিসসহ ২৩টি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেওয়ার কথা। এক্ষেত্রে ভবন তুলে কারখানা ব্যবসার চার বছর পর ২০১৮ সালে ছাড়পত্র দেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (ওয়্যারহাউজ ও ফায়ার প্রিভেনশন) দিনমনি শর্মা। তখনই দিনমনি শর্মাসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের সকলের জানা ছিল অনিয়মের তালিকা। যার বিপরীতে মিলেছে তিন শ’ টাকা স্ট্যাম্পের অঙ্গীকারনামা। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যারা রিকমান্ড করে প্রতিপালন করেননি, এগুলোর সমাধান করেননি; এটা নিয়ম মোতাবেক ও আইন মোতাবেক করা হয়নি। 

আবার এই স্মারক নাম্বারে একই কর্মকর্তা নকশায় কোনও পরিবর্তন না করা হলেও অনুমোদনের মেয়াদ বাড়ান তিন বছর। 

এদিকে নকশা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল ফায়ার সেফটি সলিউশন লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমিত ভৌমিক বা প্রকৌশলীর কোনও নিবন্ধন নাম্বারও নেই নকশার সাথে। 

কিছু শর্তসহ ছয় মাসের অঙ্গীকারনামা দিয়ে অনুমোদন দেওয়ার পর সেগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয় হাসেম ফুড লি.। কিন্তু এরপরও সেটা বাতিল না করে প্রতিষ্ঠানটির মেয়াদ আরও তিন বছর বৃদ্ধি করা হয়। সেটা ঠিক হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সাবেক পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ। এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি।’

প্রসঙ্গত, গত ৮ জুলাই হাশেম ফুডস লি. এর কারখানায় আগুনে ৫২ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যান। এসময় চেয়ারম্যান আবুল হাশেম, তার ছেলে তাওসিফ ইব্রাহীম, তানজীব ইব্রাহিম ও তারেক ইব্রাহীমকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। কিন্তু দুই দিনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের আদালতে লাশ হস্তান্তরের আগেই জামিন পান মালিক পরিবারের সকলে।   

আরও পড়ুন: কারখানা পরিদর্শন অধিদফতরের গাফিলতি খতিয়ে দেখবে সংসদীয় কমিটি