জনবল বাড়ালে ট্রেনে পাথর ছোড়া বন্ধ হবে?

চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়া বন্ধে আরও দেড় হাজার জনবল নিয়োগের সুপারিশ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। ২৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই পরিমাণ জনবল নিয়োগ দিলে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়া ও চুরি-ডাকাতি বন্ধ হবে। প্রশ্ন উঠেছে, শুধু জনবল বাড়ালেই প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার জুড়ে থাকা রেলপথের সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব?
 
বৈঠকে মন্ত্রণালয় জানায়, চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের সঙ্গে সমন্বয়ের ফলে দুর্ঘটনা অনেকটা কমেছে। আরও দেড় হাজার জনবল বাড়ালে পাথর ছোড়া পুরোপুরি বন্ধ করতে সুবিধা হবে। আলোচনা শেষে জনবল বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করে কমিটি।
 
সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আরও দেড় হাজার জনবল বাড়ালে কাজটা সহজ হবে। তাই আমরা সুপারিশ করেছি।’

 

রেলপথ গবেষক ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা আতিকুর রহমানের মতে, ‘শুধু জনবল দিয়ে রেলপথ নিরাপদ করা যাবে না। এজন্য পর্যাপ্ত গবেষণার দরকার আছে। রেলপথের কোন কোন এলাকায় ঢিল ছোড়া হয় সেগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে আগে। গতানুগাতিক প্রচারণা না করে গবেষণার মাধ্যমে এর সমাধান বের করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতে ট্রেনের জানালায় দুই স্তরের কাচ থাকে। কেউ ঢিল ছুড়লে প্রথম গ্লাসটি ভাঙলেও ভেতরের অক্ষত থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে ট্রেনের জানালায় যেসব গ্লাস থাকে সেগুলো নিম্নমানের। ছোট ঢিল পড়লেই ভেঙে যায়।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ রেলওয়ের হিসাবে এখন রেলপথের দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৯৫৬ কিলোমিটার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার। এটি আরও বাড়ছে। তবে সেই অনুযায়ী বাড়েনি রেলের নিরাপত্তা। এর মধ্যে উটকো ঝামেলা হিসেবে দেশের কিছু কিছু এলাকায় রেল লাইনের পাশে থাকা বখাটেরা বিনা কারণেই ইট-পাথর ছোড়ে ট্রেনে। এমন ঘটনায় মানুষ আহত হচ্ছেন প্রায়ই। মারাও গেছেন কেউ কেউ।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে রেলকে নিরাপদ করা যাবে না। জনবল থেকে সরে স্মার্ট উপায় খুঁজতে হবে রেলওয়েকে।

জানতে চাইলে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রেলের অবকাঠামোতে যে বিনিয়োগ হচ্ছে তার সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। যদি রেলে দ্রুতগতি নিশ্চিত না করা যায় তবে বিনিয়োগের রিটার্ন আসবে না। নিরাপত্তাও আসবে না।’

তিনি আরও বলেন, “বড় সমস্যা রেল লাইনের আশেপাশে মানুষের অবৈধ বসবাস। যার ফলে ট্রেন দ্রুতগতিতে চলতে পারছে না। এতে দুর্ঘটনা ঘটবে। এখন ঢিল ছোড়া ও বিনা টিকিটে স্টেশনে প্রবেশসহ সবকিছুর সমাধান হচ্ছে ‘অ্যাকসেস কন্ট্রোল করিডোর’। ঢাকা-মাওয়া করিডোরে প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত একটি স্টেশন হচ্ছে। এর আগে কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষই বলেছিল- এটা বাংলাদেশে সম্ভব না। এখন কিন্তু সম্ভব হয়েছে।”

এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘মানুষের ওপর নির্ভরশীল কোনও সিস্টেমে নির্ভর করা হলে কোনও দিন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। রিক্রুটমেন্ট বাণিজ্য হবে। আসল লোক পাওয়া যাবে না। তাই বলবো, লোক-সর্বস্ব চিন্তা না করে বিজ্ঞানসম্মত নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। জনবল বাড়ানো মানে আরেকটা দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়ে যাওয়া।’

জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রেলের নিরাপত্তা বাহিনী থেকে কিছু জনবল চাওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, এদের নিয়োগ দেওয়া হলে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, চুরি ডাকাতি কমবে। সংসদীয় কমিটিও এর সুপারিশ করেছে।’