একটি ভালো কাজ করলেই বিনামূল্যে খাবার

কোনও অসহায় মানুষকে সাহায্য করেছেন কিংবা কোনও অন্ধ ব্যক্তিকে রাস্তা পার হতে সহায়তা করেছেন—এরকম ভালো কাজ করে থাকলে আপনার জন্য দরজা খোলা ‘ভালো কাজের হোটেল’ এর। নামে হোটেল হলেও তার বিস্তৃতি ঢাকা শহরের কয়েকটি পয়েন্টে। দুপুর–বিকাল–সন্ধ্যা তিন বেলা তাদের খাবারের আয়োজন চলে সুবিধাবঞ্চিত অসহায় মানুষদের জন্য। তবে শর্ত একটাই- ভালো কাজ করতে হবে। পথশিশু, ছিন্নমূল, অসহায়, ভবঘুরে মানুষগুলো আসছে, বসছে এবং পেট ভরে খেয়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র একটি ভালো কাজ করার কথা বলেই। চেয়ার নেই, টেবিল নেই তবুও তারা অতিথি এবং পেট ভোরে খাচ্ছে খোলা আকাশের নিচেই।

‘ভালো কাজের হোটেল’-এর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে খেতে কোনও টাকা দিতে হয় না। যেকোনও একটি ভালো কাজ করে এসে সেচ্ছাসেবীদের বলতে হয়। সেচ্ছাসেবীরা সেই কাজের কথা এবং তাদের পরিচয় খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখেন। আর বিনিময়ে পাওয়া যায় পেট ভরে আহার করার সুযোগ।

রাজধানীর বনানী ব্রিজ সংলগ্ন করাইল বস্তির সামনে এই হোটেলের ভ্রাম্যমাণ গাড়ির দেখা মেলে দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত। এরপর হাতিরঝিল সংলগ্ন এফডিসি মোড়ে গাড়ি চলে আসে দুপুর আড়াইটায়। সেখানে ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করে এই হোটেল। এরপর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের দেয়াল ঘেঁষে ফুটপাতের ওপর সন্ধ্যার পর পরই শুরু হয় ভালো কাজের হোটেলের কার্যক্রম।

ব্যতিক্রমী এই হোটেলে খাবারের মেন্যুতে শুধু ডিম খিচুড়ি নয়, কোনওদিন থাকছে ভাত মাছ সবজি আবার কোনওদিন পোলাও মাংস। আবার কোনওদিন অতিথিরা স্বাদ নেন গরম গম ভাতের সঙ্গে গরুর মাংসের। তাছাড়া মোরগ পোলাও বাদ পড়ে না খাবারের মেন্যু থেকে। প্রতিদিন একই খাবারের আইটেম না করে ভিন্নতা থাকেই বলেন জানান স্বেচ্ছাসেবকরা। এই তো গত শুক্রবার ৩৪৮ জন অতিথির জন্য রান্না করা হয়েছিল মুরগির বিরিয়ানি। পরদিন শনিবার মোরগ পোলাও ছিল ডেইলি টেন স্কুলের (বাড্ডা এবং মাদারীপুর শাখা) সুবিধাবঞ্চিত প্রায় ৪০০ জন শিশুদের জন্য। আর হোটেলের অতিথিদের জন্য ছিল গরুর মাংস ও গরম সাদা ভাত। সোমবার রান্না হয়েছে ৩০৭ জনের জন্য চিকেন তেহারির সঙ্গে ডিম। সেদিন রাতে কমলাপুর হোটেলে ৩০৯ জনের জন্য রান্না হয়েছে সাদা ভাত ও ডিম সবজি। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিন বিশেষ আয়োজন তো থাকেই। সেচ্ছাসেবীরা জানান, প্রতিদিন গড়ে ৬০০-৭০০ জনের জন্য আহারের ব্যবস্থা করা হয়। 

ভালো কাজের হোটেলের সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবক সাকিব হাসান শাওন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই কার্যক্রম আমরা কয়েকজন বড় ভাই বন্ধু মিলে শুরু করি। তখন আমরা উৎসবকেন্দ্রিক দিনগুলোতে খাবারের ব্যবস্থা করতাম। ২০১৯ সাল থেকে সপ্তাহে একদিন এবং করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন এই কার্যক্রম আমরা শুরু করি। তখন আমরা ১৫-২০ জনের মতো একটা গ্রুপ ছিলাম। এখন ঢাকার ভেতরে প্রায় ৩০০-৪০০ সেচ্ছাসেবী আছেন। আমাদের এই কাজের মূল শক্তি হচ্ছে আমাদের ‘ডেইলি টেন’ মেম্বার। আমরা প্রথমে ১০-২০ জন মেম্বার ছিলাম। ২০১৯ সালের পর এসে আমরা সদস্য বাড়াই এবং উন্মুক্ত করে দেই। বর্তমান আমাদের সদস্য সংখ্যা ১ হাজার ২৬৫ জনের মতো।

সদস্য হওয়ার শর্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদেরকে বেসিক কিছু তথ্য দিতে হয়। এন্ট্রি ফি বাবদ ২০০ টাকা দিতে হয়। সদস্যরা প্রতিমাসে আমাদের স্টিলের ব্যাংকে ১০ টাকা করে অনুদান দেয় তাতে মাস শেষে একেক জনের কাছ থেকে আমরা ৩০০ টাকা করে পাই। এছাড়া আমাদের কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন তারাও আমাদের সঙ্গে যুক্ত।