বিমানের ভুতুড়ে গণশুনানি!

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সেবা প্রদানের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে জানাতে সভা ও গণশুনানি করেছে। অথচ আগে থেকে এর কোনও ঘোষণা দেওয়া হয়নি। গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও গণমাধ্যমের উপস্থিতি ছাড়াই এমন ভুতুড়ে আয়োজন আদৌ গণশুনানি কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

বুধবার (২২ ডিসেম্বর) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করে, ২৫ জন যাত্রীসহ সংস্থাটির বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গণশুনানিতে অংশ নেয়। 

জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে নিয়মিত গণশুনানি আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন সংস্থা গণবিজ্ঞপ্তি জারির পর গণশুনানির আয়োজন করে। গণশুনানিতে আগ্রহীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের জন্য আগে থেকে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ঘোষণা দেওয়া হয়। গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে গণশুনানিতে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে অভিযোগ ও মতামতসহ ইত্যাদি শোনা হয় এবং কর্তৃপক্ষ সেসবের যথাসম্ভব প্রতিকারের উদ্যোগ নিয়ে থাকে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার স্বার্থে প্রকাশ্য আয়োজনের পরিবর্তে বুধবার যেভাবে সভা করেছে এবং অনুষ্ঠানে যাদের আনা হয়েছে তারা আদৌ সাধারণ যাত্রী কিনা সেসব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

এ প্রসঙ্গে জানতে একাধিকবার চেষ্টা করেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকারের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এভিয়েশন ও ট্যুরিজম খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরামের (এটিজেএফবি) সাধারণ সম্পাদক তানজিম আনোয়ার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গণশুনানি হলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অভিযোগ ও মতামত জানার প্রকাশ্য একটি সভা। এতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গণশুনানির ঘোষণা দেওয়া হয়। গণমাধ্যমও এসব আয়োজনে উপস্থিত থাকে। সরকারি বিভিন্ন দফতরকে এভাবেই গণশুনানির আয়োজন করতে দেখেছি। কিন্তু বিমানের পক্ষ থেকে আগে কোনও ঘোষণা পাওয়া যায়নি।

এদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ রয়েছে, বুধবার দুপুর ১২টায় সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি বিষয়ে অবহিতকরণ সভা ও গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ২৫ জন যাত্রীসহ বিমানের বিভিন্ন পরিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সভা ও গণশুনানিতে অংশ নেন। এ সময় বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) যাত্রীসাধারণকে বিমানের সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদানসহ সেসব প্রাপ্তির পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করেন। কয়েকজন যাত্রী বিমানের সেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত ও পরামর্শ দেন। বিমান ম্যানেজমেন্ট তাদের মতামত ও পরামর্শ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দেন। এ সময় একজন যাত্রী বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকার সেলস সেন্টারের কর্মচারীদের ব্যবহারের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘বাইরে থেকে যা শোনা যায় বাস্তবে তা ঘটেনি। তারা আমার সঙ্গে বেশ আন্তরিক ছিলেন।’

করোনা মহামারির মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক (প্রশাসন) জিয়াউদ্দীন আহমেদ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতেও প্রতিটি ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার ধারা বজায় রাখার অনুরোধ জানান।