হারিয়ে গেছে এইচএসসি ভোকেশনালের ১৮৯টি উত্তরপত্র

গোপালগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের এইচএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষার ১৮৯টি উত্তরপত্রের দুটি প্যাকেট হারিয়ে গেছে। হারিয়ে যাওয়া প্যাকেটের মধ্যে রয়েছে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান প্রথমপত্রের ৯৬টি এবং একই বিষয়ের দ্বিতীয়পত্রের ৯৩টি উত্তরপত্র।

প্রসঙ্গত, এই দুটি পরীক্ষা গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষা শেষে গত ২ ডিসেম্বর স্থানীয় পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে উত্তরপত্রের সিলগালা করা দুটি প্যাকেট সাদা একটি কাপড়ের ব্যাগে পাঠাতে মোটরসাইকেলযোগে রওনা দেন অ্যাকাডেমিক সহকারী নুরুল ইসলাম। উত্তরপত্রগুলোর দুটি প্যাকেট পোস্ট অফিসে নিয়ে যাওয়ার সময় কোনও পুলিশ পাহারা ছিল না। পোস্ট অফিসে পৌঁছানোর আগেই খাতাগুলো পড়ে যায়। পরে আর সেগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি। অ্যাকাডেমিক সহকারী নুরুল ইসলাম এই ঘটনায় সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
এই ঘটনায় ওই দিনই বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী কেন্দ্র সচিব গোপালগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান এবং অ্যাকাডেমিক প্রধান হিসেবে কলেজের ইনস্ট্রাক্টর (ড্রেসমেকিং অ্যান্ড টেইলারিং) মো. তৌহিদুর রহমান খানকে গত ৯ জানুয়ারি সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খানের সই করা অফিস আদেশে এই দুই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং বিভাগীয় মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়।  

অন্যদিকে, অ্যাকাডেমিক সহকারী নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান কলেজের অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘উত্তরপত্রগুলো শিক্ষা বোর্ড পাঠাতে পোস্ট অফিসে নিয়ে যাচ্ছিলেন নুরুল ইসলাম। সেগুলো রাস্তায় পড়ে যায়। পরে আর পাওয়া যায়নি।’

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিবের সই করা অফিস আদেশে বলা হয়, ‘অপরিহার্য নিরাপত্তা ও অত্যাবশ্যকীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা এবং নিজে বা দায়িত্বশীল কোনও শিক্ষক বা কর্মকর্তার মাধ্যমে উত্তরপত্র পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় কেন্দ্র সচিব হিসেবে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চরম কর্তব্য অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন।’

তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ তুলে ধরে অফিস আদেশে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বলা হয়, ‘দায়িত্বহীনতা ও পরিপূর্ণভাবে পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনায় সুস্পষ্ট ব্যর্থতার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।’ 

অ্যাকাডেমিক প্রধান ইন্সট্রাক্টর (ড্রেসমেকিং অ্যান্ড টেইলারিং) মো. তৌহিদুর রহমান খানের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ তুলে ধরে বলা হয়, ‘১৮৯টি উত্তরপত্রের দুটি প্যাকেট হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কর্তব্যে অবহেলা, চরম দায়িত্বহীনতা ও পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনায় সীমাহীন ব্যর্থতার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়।’

মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশে অধ্যক্ষ ও অ্যাকাডেমিক প্রধানের বিষয়ে বলা হয়, ‘এ ধরনের কার্যকলাপ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অস্থিরতা, অসন্তোষ ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে।’

তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি (৩)-এর উপবিধি (খ) অনুযায়ী, ‘অসদাচরণ’-এর পর্যায়ভুক্ত অভিযোগ হিসেবে কেন্দ্র সচিব গোপালগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান ও অ্যাকাডেমিক প্রধান হিসেবে কলেজের ইনস্ট্রাক্টর (ড্রেসমেকিং অ্যান্ড টেইলারিং) মো. তৌহিদুর রহমান খানকে সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
হারিয়ে যাওয়া উত্তরপত্রের পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (গোপনীয়) মো. ইয়াছিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পরীক্ষার্থীদের কনসিডার করা হবে। আগের পরীক্ষাগুলো যাচাই করে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে তাদের নম্বর দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশ করা হবে।’

প্রসঙ্গত, করোনার কারণে এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আবশ্যিক বিষয় বাদ দিয়ে গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হয়। আবশ্যিক বিষয়ের সাবজেক্ট ম্যাপিং করে নম্বর দেওয়া হবে। পরীক্ষা দেওয়া নৈর্বাচনিক তিন বিষয়ের নম্বর ও আবশ্যিক বিষয়গুলোর সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের নম্বর যোগ করে ফলাফল প্রকাশিত হবে।