বিধিনিষেধের মধ্যেও চাকরির পরীক্ষা নেবে শিল্পকলা একাডেমি

করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। ইতোমধ্যে অর্ধেক মানুষ নিয়ে অফিস চালানো শুরু হয়েছে। স্কুল-কলেজ ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্যে ২৮ জানুয়ারি ৪টি সার্কুলারের বিপরীতে চাকরির পরীক্ষার দিন নির্ধারণ করেছে শিল্পকলা একাডেমি। কেন এর মধ্যেও পরীক্ষা নিতে হবে জানতে চেয়ে একাডেমির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা কথা বলতে রাজি হননি। এদিকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে টেলিফোনে পাওয়া যায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের অধ্যাপক দেবপ্রসাদ দাঁ জানান, ‘শিল্পকলা থেকে কণ্ঠ ও যন্ত্র সংগীতে দুজন করে বিশেষজ্ঞ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। আমরা দুজন করে চারজনের নাম পাঠিয়ে দিয়েছি’। এর আগে চাকরির পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল সেটির কোন সমাধান হয়েছিল কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার জানা নেই। তবে আমাদের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছিলে। পরে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। তারা কিছু করেছিল কিনা আমরা জানি না।’

সূত্র জানায় শুক্রবারে চারটি আলাদা সার্কুলারের পরীক্ষা একসঙ্গে হবে। এতে পরীক্ষার্থীর মধ্যে কেউ যদি একাধিক পদে নিয়োগ পরীক্ষা দিতে চান তাহলে তিনি সেটা পারবেন না।

শিল্পকলা একাডেমির জনসংযোগ কর্মকর্তা হাসান মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পরীক্ষা হবে বদরুন্নেসা কলেজে। একাধিক সার্কুলারে কেউ আবেদন করে থাকলে কেবল একটির জন্যই পরীক্ষা দিতে পারবেন’। ১৪ ক্যাটাগরিতে মোট ৪২টি পদের জন্য দুই হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন বলেও তিনি জানান।

করোনার সংক্রমণের মধ্যে কেন একাডেমি পরীক্ষা নিতে চায় প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ প্রশ্নের উত্তর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও মন্ত্রণালয়ের সচিব দিতে পারবেন।’

উল্লেখ্য, শিল্পকলা একাডেমির নোটিসে বলা হয়, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত প্রশিক্ষণ ক্লাসসমূহ আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

২০১৭ সালের আগস্টে তিনটি সার্কুলার জারি করে শিল্পকলা একাডেমি। এর অধীনে নৃত্যশিল্পী ১২ জন, কণ্ঠশিল্পী আটজন, কালচারাল অফিসার ছয়জন, যন্ত্রশিল্পী ১০ জন, ইনস্ট্রাক্টর (নৃত্য) তিনজন, ক্যামেরাম্যান দু'জন, ইনস্ট্রাক্টর (চারুকলা), সহকারী পরিচালক (গবেষণা), সহকারী পরিচালক (বাজেট), মঞ্চ ব্যবস্থাপক এবং ইনস্ট্রাক্টর (সংগীত ও যন্ত্র) পদে একজন করে নিয়োগ দেওয়া হয়। একাডেমি সূত্র জানায়, ওই সার্কুলারে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের অধিকাংশই লিখিত পরীক্ষায় পাস করেননি। আবার অনেকে পাস করলেও মৌখিক পরীক্ষার চিঠি পাননি। অথচ নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে অকৃতকার্য প্রার্থীদেরও মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয়েছে। অভিযোগ আছে, এটি একটি বিশেষ কৌশল। মহাপরিচালক আগে থেকেই ঠিক করে রাখেন, কোন পদে কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে। লিখিত পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত প্রার্থী পাস করতে না পারলে মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয় সবাইকে।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকার যেখানে জনসমাগম সীমিত করার কথা বলেছে, জাতীয় কমিটি যেখানে ভিড় এড়িয়ে চলার সুপারিশ করছে, সেখানে এই পরীক্ষা কী করে অনুষ্ঠিত হয়? প্রতিদিন শনাক্ত ও শনাক্তের হার বাড়ছে। সেখানে কোনও সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই ধরনের পরীক্ষার আয়োজন করা মানে সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করা। এখান থেকে যে সংক্রমণ আরও ছড়াবে না- সে নিশ্চয়তা কি কর্তৃপক্ষ দিতে পারবে? আর একজন মানুষও যদি এখান থেকে সংক্রমিত হয় তাহলে তার দায় আয়োজকদের নিতে হবে।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে না হওয়া এ পরীক্ষা কেন এর মধ্যে নিতে হবে সেই প্রশ্ন খোদ পরীক্ষার্থীদেরও।