বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্য ‘ভুতুড়ে’ ফ্রি ইন্টারনেট ও ফোন

হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য সর্বত্রই ওয়াইফাই সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়ার পদ্ধতিগত জটিলতায় বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন না। অন্যদিকে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য বিমানবন্দরে আছে ফ্রি টেলিফোন। দৃশ্যমান স্থানে না রাখা, নষ্ট টেলিফোন সেট, সংযোগে ত্রুটি থাকায় ফ্রি টেলিফোনের সুবিধাও সবসময় পান না যাত্রীরা। এ কারণে যাত্রীরা ফ্রি ইন্টারনেট ও টেলিফোনকে বলছেন ‘ভুতুড়ে আয়োজন’।

আবুধাবি থেকে গেলো সপ্তাহে দেশে আসেন রাশেদুল হাসান। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট স্বাস্থ্য ডেস্কে দেখানোর সময় জটিলতায় পড়েন। ইন্টারনেট সংযোগ পেলে অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে দেখানোর কথা বললেন রাশেদুল। তখন তাকে জানানো হলো, বিমানবন্দরে ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ আছে। মোবাইলে ওয়াইফাই সংযোগ করতে গিয়ে দেখেন, সেখানে তাকে দিতে হবে মোবাইল নাম্বার। মোবাইল নাম্বার দেওয়ার পর জানানো হলো তার মোবাইলে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড মেসেজ করে পাঠানো হচ্ছে। সেই পাসওয়ার্ড দিলেই তিনি যুক্ত হবেন ইন্টারনেটে। কিন্তু দুবাইয়ের মোবাইল নাম্বার তো বাংলাদেশে নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না, ফলে সেখানে আদৌ কোনও মেসেজে পাসওয়ার্ড যাচ্ছে কিনা, আর গেলেও সেটি পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।

রাশেদুল হাসান বলেন, এটা একটা কমন সেন্স ইস্যু। যে ব্যক্তির কাছে বাংলাদেশের কোনও সিম থাকবে না, সেই ব্যক্তির বিমানবন্দরে ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে। অনেক দিন পর যারা বিদেশ থেকে আসেন, তাদের কাছে বাংলাদেশের সিম না থাকাই স্বাভাবিক। ফলে বিমানবন্দরের মতো জায়গায় মোবাইলে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড দিয়ে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার পদ্ধতিটা অযৌক্তিক। ছোট একটা বিষয়ে এমন ভুতুড়ে ব্যবস্থা করে রেখেছে।

রাশেদের মতো আরেক যাত্রী হাসনাইন ইমতিয়াজ বলেন, গত বছরও আমি দেশে এসে বিমানবন্দরে এসে এই সমস্যা দেখেছি, এবারও একই অবস্থা। অযোগ্য, অদক্ষ লোকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নেটওয়ার্ক স্থাপনের করা হয়েছে টাকা খরচ করে, কিন্তু যাদের জন্য আয়োজন তারা সুফল পাচ্ছে না। যাত্রীরা কেমন ইন্টারনেট পায় কখনও তারা (বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ) এটার খোঁজ নেয়নি। খোঁজ নিলে তো টের পেতো, বছরের পর বছর এমন পরিস্থিতি থাকতো না।

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য টেলিফোন ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বিটিসিএল’র উদ্যোগে বসানো টেলিফোন থেকে বিনা পয়সায় ফোন করা যাবে। তবে এই টেলিফোন কোথায় আছে সেটা খুঁজে বের করাই যাত্রীদের জন্য চ্যালেঞ্জ। দৃশ্যমান স্থানে টেলিফোন বুথের সাইন না থাকায় ফ্রি টেলিফোন বুথ খুঁজে পেতে গোলক ধাঁধায় পড়তে হয় যাত্রীদের। টেলিফোন পাওয়ার পেলেও কল করতে গেলে দেখা যাবে টেলিফোন সেটের বাটন নেই কিংবা সংযোগ নেই।

বিমানবন্দরে এসে যাত্রীরাঅপেক্ষমাণ স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান। অনেকেই গাড়ি কোথায় আছে জানতেও যোগাযোগের প্রয়োজন পড়ে। সে সময়ে ফোন কিংবা ইন্টারনেটের সুবিধা না থাকলে যাত্রীদের যোগাযোগ সহজ হয়। বিমানবন্দরে ইন্টারনেট ও ফোন থাকার পরও ব্যবহার উপযোগী না থাকায় ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।  

এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এয়ার কমডোর সাদিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্যই ইন্টারনেট ও টেলিফোন সুবিধা রাখা হয়েছে। সেগুলো ব্যবহারে কোনও অসুবিধা থাকলে তা দ্রুত দূর করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।